আদালতে একটি গণপিটুনির মামলা চলাকালে বিচারপতির বক্তব্য সাড়া ফেলেছে অনলাইনে। গণপিটুনি খেয়ে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি প্রয়াত হয়েছেন। অনেক ক্ষমতাসীন ব্যক্তি রয়েছে যারা ব্রেন খাটিয়ে গণপিটুনির নাটক সাজিয়ে নিজের ব্যক্তিগত শোধ তলেন এমন ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এবার এবার সকল বিষয় নিয়ে হাইকোর্টের এক বিচারপতি ভিন্ন ধরনের বক্তব্য শুনে হতবাক উপস্থিত আইজীবিরা।
তিনি বলেন গণপিটুনির নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হ/ ত্যার লাইসেন্স থাকা সমাজের যেকোনো ব্যক্তির জন্য ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ। হাইকোর্ট উল্লেখ করেছেন, প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে না।
বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহ হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে এ পর্যবেক্ষণ করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে তসলিমা বেগম রেনু (৪০) রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় তার মেয়েকে ভর্তি করতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান। এ সময় শিশু অপহরণের অভিযোগে তাকে পিটিয়ে হ/ ত্যা করা হয়। এ হ/ ত্যা মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর ষষ্ঠ দায়রা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রেণু হ/ ত্যা মামলার বিচার নিশ্চিত করতে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেন আদালত।
এ মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যথারীতি ও যথাসময়ে সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও তদারকি কেন নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি, তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়মিত তদারকি ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত উল্লেখ করেছেন যে ভুক্তভোগী পালিয়ে যাচ্ছেন না। তার হেফাজতে কোনো শিশু পাওয়া যায়নি। শিশু হারানোর সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও আসামী একটি অবৈধ ভিড় তৈরি করে এবং বেআইনিভাবে স্কুলের অধ্যক্ষের কক্ষে অগ্নিসংযোগকারী স্লোগান দিয়ে এবং ভিকটিমকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়।
যদিও সে কোন অপরাধ করেনি, তবুও তাকে জোরপূর্বক সংযত করা হয়েছিল এবং বেঁচে থাকার জন্য অসহায় মায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে শরীরে বারবার এবং বারবার আঘাত করা হয়েছিল। এমন প্রমাণ রয়েছে যে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ঘটনাস্থলে একটি সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল।
এ ঘটনায় রাতেই রেনুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হ/ ত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ প্রকাশ্যে মারধরের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আটক করে।
আদালত মামলার প্রধান আসামি হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমকে পাঁচ দিনের প্রাক-বিচার হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। হেফাজতে থাকা অবস্থায় হৃদিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই দিন রেণুকে পিটিয়ে হ/ ত্যার আগে ‘প্রেমিক’ নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী রিয়া খাতুনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হৃদয় ও রিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। জাফর হোসেন নামে আরেক আসামিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তিনিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েক বছর আগে একটি অপপ্রচার চলতে থাকে যেটি হল পদ্মা সেতু নির্মাণে ছোট ছোট বাচ্চাদের মাথার প্রয়োজন। যে অপপ্রচারে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সারা দেশের মানুষ। যে ঘটনায় সন্দেহ জনিত কারণে এক নিরপরাধ মহিলাকে গণপিটুনি দিয়ে নিথর করা হয়। এমন অনেক দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে রয়েছে। তাই এসকল অন্যায় কাজ রোধ করা দরকার বলে মনে করেন হাইকোর্টের এই বিচারপতি।