পেশায় তিনি কলেজ শিক্ষিকা, বিবাহ বিচ্ছেদের পর ছিলেন একা। ফে”সবুক ব্যবহার করতে করতে পরিচয় হয় এক কলেজ ছাত্রের সাথে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এরপর গোপনে বিয়ে সারেন তারা। কিছুটা গোপনে হলেও দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই কাটছিল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটলো, কিন্তু সেটাও করুন পরিসমাপ্তির মাধ্যমে।
সেই আলোচিত শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের জীবন প্রদীপ নিভে গেল। ৪৭ বছর বয়সী এই কলেজ শিক্ষকের জীবন শেষ হলেও কীভাবে তার জীবন নিভে গেল সে বিষয়েও জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর সেই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে ২২ বছর বয়সী স্বামী মামুন হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।
মোল্লা ম্যানশন ভবনের বাসিন্দা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার সকালে স্বামী মামুন ভবনের অন্য বাসিন্দাদের জানান, গত রাতে তার স্ত্রী খায়রুন নাহার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করেছেন। লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে মেঝেতে খায়রুন নাহারের নিথর দেহ দেখতে পায়। এতে তাদের সন্দেহ হয়। এরপর তারা মামুনকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে পুলিশকে খবর দেয়।
অন্যদিকে বিয়ের পর থেকেই অসম বিয়ে ও প্রেম নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এছাড়া পারিবারিক স্বীকৃতি ছাড়া সন্তান ও পরিবার থেকে দূরে থাকায় মানসিক চাপে ছিলেন নাহার। এছাড়া মামুনও নিষিদ্ধ দ্রব্যের প্রতি আস/”ক্ত ছিলেন বলে অনেকে জানান।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর স্টেশন এলাকায় মামুনকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মামুন ওই এলাকায় গিয়ে নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবী ও তিনি তার বিক্রেতাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। স্থানীয়রা জানায়, গত রাতেও সে নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবন করতে স্টেশন এলাকায় গিয়েছিল। শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরলেও পরে রাত ২টার দিকে নৈশ প্রহরীকে ওষু’ধ কেনার কথা বলে বেরিয়ে যান। পুলিশকে মামুন জানান, ভোরে বাড়ি ফিরে ফ্যানের সঙ্গে নাহারের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপনি জানেন, এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বহুল আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। মানসিক চাপের কারণে এটি আত্মহনন কি না, আমরা তদন্ত করছি।
তিনি বলেন, তার নিথর দেহ নামানোর মধ্যেও কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
এদিকে মেয়েটির চাচাতো ভাই সাব্বির উদ্দিন জানান, মামুন তাদের ফোনে তাদের বোন আত্মহনন করেছে বলে জানায়। খবর পেয়ে তারা এসে তার বোনের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলায় একাধিক আঘা/”তের চিহ্ন রয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হ/”ত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন তিনি। তিনি এর বিচার চান। চাচাতো ভাই সাব্বির ও সাব্বিরের স্ত্রী নুরজাহান জানান, নাহারের পরিবার ও সন্তানরা এই বিয়েকে মেনে নিতে পারেনি।
এর আগে খায়রুন নাহার বলেছিলেন, আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। দিনের পর দিন তিনি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতেন। এদিকে কলেজ ছাত্র মামুনের সঙ্গে ফে”সবুকে পরিচয় হয়। মামুনের সঙ্গে কথা বলে শান্তি অনুভব করতেন তিনি। পরে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ছেলের পরিবারের কাউকে কিছু না বলে বিয়ে করলেও তার পরিবার মেনে নেয় কিন্তু খায়রুনের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। তাই তারা নাটোর শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় ওই কলেজ শিক্ষিকার দ্বিতীয় স্বামী মামুনকে পুলিশ গ্রেফ’তারের পর আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে খায়রুন এর দেহের ময়নাতদন্ত সমাপ্তের পর প্রতিবেদন ও জমা দিয়েছে পুলিশ। তবে এটি আত্মহননের ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হ/”ত্যাকান্ড সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কিছু বলেনি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে মামুনকে আদালতে তোলা হবে আদালত প্রকৃত সত্য উৎঘাটন করবে।