সিলেট এবং সুনামগঞ্জ ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যা গত ১২২ বছরেও এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখা যায়নি বলে জানা গেছে। এই ভয়াবহ বন্যায় এই দুই জেলার বেশিরভাগ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যার করেন বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। বাসিন্দাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষ। আর মানুষের এই দর্দশায় সহায়তা করতে গিয়ে প্রান হারালেন দুই তরতাজা পরোপকারী তরুন।
বন্যার্তদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক সাহায্য চেয়েছেন টিটু চৌধুরী। কেউ বিপদে পড়েছে জানতে পারলে কাছাকাছি কেউ থাকলে এগিয়ে যেতে বলেন তিনি। কিন্তু তার বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রয়াত হন ওই ব্যক্তি।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সিলেট নগরীর খরাদিপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন টিটু চৌধুরী (৩৫)।
বন্যার পানিতে পড়ে থাকা টিভির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
টিটু সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার হরিপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে। সিলেট নগরীর খরাদিপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই তরুণ। টিটুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সকালে বন্যার পানি টিটুর ঘরে ঢুকে তার কোমরের সমান উচ্চতায় পৌঁছেছে। এরপর টিটু ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রাখছিলেন। এক পর্যায়ে পানির নিচের একটি টিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। দ্রুত টিটুকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়াত ঘোষণা করেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ টিটুর প্রয়ানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, বাড়ি প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে আক্কাস মিয়া (২৮) নামের এক যুবক প্রয়াত হয়েছেন। শনিবার দুপুর ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল উপজেলার চণ্ডীগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বন্যার পানি থেকে তার নিথর হয়ে পড়ে থাকা দেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নের তেলাছি গ্রামে বন্যার্তদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হন আক্কাস। সে দুর্গাপুর পৌর শহরের দশাল গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রহিমের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চণ্ডীগড় ইউনিয়নের তেলাচি গ্রামে তার আত্মীয় আব্দুল বারেকের বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এমন খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে গ্রামের দিকে রওনা দেয় আক্কাস। পথে চণ্ডীগড় হাইস্কুলের সামনে প্রবল স্রোতের কবলে পড়ে আক্কাসহ আরও তিনজন। আক্কাস পরে বাকি তিন সাঁতারুকে হারায়। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে খবর দেয়।
শিবিরুল ইসলাম যিনি দুর্গাপুর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এ বিষয়ে বলেন, কোনো ধরনের অভিযোগ না থাকার কারণে তাদের দেহ তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে ঐ এলাকার বাসিন্দারা জানান, ছেলে দুটি মানুষের উপকারে এগিয়ে আসে এবং তারা দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের এভাবে জীবন দিতে হবে কেউ ভাবেনি।