বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা সরকারের বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি পেয়ে বর্তমানে চিকিৎসারত আছেন। বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনেকটা অবনতির দিকে এমনটি জানিয়েছেন তার চিকিৎসকেরা। তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর তার চিকিৎসকেরা তাকে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট অনুরোধ জানিয়েছে তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে। বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য সভা-সমাবেশ এবং সেই সাথে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখে চলেছে। তবে এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। পররাস্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সময়ে একটি বক্তব্যের মাধ্যমে জানিয়েছেন বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর কোনো ধরনের সুযোগ আইনগত ভাবে নেই। তাই, আপাতত খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা লাভের কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে এতো কিছু করার পরেও ‘মানবিক বিবেচনার’ প্রশ্ন কেন উঠবে তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে তাকে মানবিক বিবেচনায় সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছেন। মানবিক বিবেচনা তো সেখানে হয়ে গেছে। আজ এ প্রশ্ন উঠবে কেন? এতো কিছু করার পরেও কেন আবার এ প্রশ্ন উঠবে যে, আমরা মানবিক হচ্ছি না। আমি যেটা বলেছি, সেটা আইনের দিক থেকে বলেছি। এখন মানবিকতা দেখাতে গেলেও আমাকে আইনেই যেতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিদেশি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আনিসুল হক।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন নতুন করে ওই আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই। তাকে আইন অনুযায়ী জেলে গিয়েই আবেদন করতে হবে, এটাই আইনের কথা।
এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে করা আবেদনে আইনের কোনো ধারা উল্লেখ ছিলো না বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় শতর্যুক্ত বা শর্তমুক্ত মুক্তির বিষয়টি ছিলো। সেই যে দরখাস্ত সেটি নিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে শতর্যুক্ত ছিলো।
আইনমন্ত্রী বলেন, নির্বাহী আদেশে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তিতে শর্ত ছিল, বেগম জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। বাসায় থাকতে হবে, হাসপাতালে যেতে পারবেন না এমন না। তিনি কিন্তু হাসপাতালে আছেন। তারপরেও কিন্তু এখন নতুন করে করা আবেদনে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। এখন কথা হলো, সরকার তো আগের আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন। এখন কি নিষ্পত্তি হওয়া আবেদন আবারো পুনর্বিবেচনা করা যায়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দণ্ড স্থগিত রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছেন, এটা কি মানবিক বিবেচনা নয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় দণ্ড স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মানবিক দিকটাই বিবেচনা করেছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, একজনের দুর্দিন যদি আরেকজনের আনন্দের দিন হয় তবে সেটা স্তিমিতভাবে পালন করা উচিত। দেখুন, এটা স্বীকৃত যে আমরা যে সমাজে বাস করি, সমাজের একটা স্ট্রাকচার আছে, আমরা খুব ভালো করেই জানি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট হ’/ত্যা করা হয়েছে। এটাও প্রমাণিত যে, বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্ট পালিত হয়। এটা কাকে কোন বিষয়টাকে কটাক্ষ করা? বিষয়টা কতো ইম্পোর্টেন্ট সেটা আপনারা বিবেচনা করেন। এটা কোন দিনটিকে কটাক্ষ করে পালন করা হয়, সেটি আপনারাই বিবেচনা করবেন।
তিনি বলেন, আমি কথাগুলোই ফ্যাক্ট। প্রধানমন্ত্রী একজন মা হিসেবে একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) যখন প্রয়াত যান তখন তার বাসায় গিয়েছিলেন। যতোই শত্রুতা থাকুক, যতোই পলিটিক্যাল পার্থক্য থাকুক, তার মুখের ওপরে বাড়ির গেট সেদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। এটা কি মানায়?
আইনমন্ত্রী বলেন, সেই অবস্থান থেকেও প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিকে বিবেচনা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির মামলায় সা’জাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছেন। এরপরও মানবিক বিবেচনার প্রশ্ন কেন উঠবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, আইনের বাইরে গিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি আর মানবিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এসময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা হলে সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তদন্তের পর নিতে হবে মামলা। নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করাও উচিত। তবে সে আইন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
প্রসংগত, বিএনপি সভানেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আইনগত কোনো উপায় নেই এমন কথা বলার পর বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা এই বিষয়ে বলছেন, সরকার রাজনৈতিক কারনে তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। আইনজীবিদের একটি দল কয়েকদিন আইনমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফলাফল পায়নি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে, এমনটাই জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা আরও একটি রক্তক্ষরনের উৎস খুজে পেয়েছেন, যেটা তার জীবনের ঝুকি আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিল।