পদ্মা সেতুর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি গর্ব এবং বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম বৃহত্তম স্থাপনা। দক্ষিণ বাংলার মানুষের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো এই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মাধ্যমে। যার কারণে যারপর নাই যাতায়াত সুবিধা ভোগ করছে দক্ষিণ বাংলার মানুষ এবং সন্তোষ প্রকাশ করছেন তারা। পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে সরকার, যেটা ধারনার বাইরে ছিল পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের।
টানা ছুটিতে পদ্মা সেতু দিয়ে গত চার দিনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ সময় সেতু দিয়ে ৬০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এই চার দিনে সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ৯ কোটি টাকার বেশি। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে দুই কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে।
চারদিনের ছুটিতে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ ও নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল এখন ভ্রমণপিপাসুদের তালিকায়। এ ছাড়া চারদিন ছুটি পাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার মানুষ পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা এক যাত্রী বলেন, দুই বছর পর সবার সঙ্গে বাড়িতে পূজা করতে গিয়েছি। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে খুব দ্রুত বাড়িতে পৌঁছেছি।
মুন্সীগঞ্জের নির্বাচনী অফিসের কর্মচারী রুবেল মিয়া জানান, কয়েকদিন ছুটি থাকায় পরিবার নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, প্রথমবার নিজ চোখে পদ্মা সেতু দেখে ভালো লেগেছে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত প্রতিদিনের চেয়ে বেশি যানবাহন সেতু পারাপার হয়। এই দিনগুলিতে, প্রতিদিন গড়ে ১৫,০০০-এর বেশি যানবাহন অতিক্রম করে এবং দুই কোটির বেশি টোল আদায় করা হয়। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, চার দিনে মোট ৬৮ হাজার ৬৮টি ছোট-বড় যানবাহন পদ্মা সেতু পার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ২ কোটি ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা, শুক্রবার ২ কোটি ৩২ লাখ ৬ হাজার ১০০ টাকা, শনিবার ২ কোটি ৫৫ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা এবং রোববার ২ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ টাকা আদায় হয়েছে। মোট টোল আদায় হয়েছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৫০ টাকা।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পর দক্ষিণ বাংলার অর্থনৈতিক দিক নজর কেড়েছে দেশের মানুষের, যেখানে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। সক্রিয় হয়ে উঠছে মংলা বন্দর এবং পদ্মা সেতু সংযোগ মহাসড়কের আশেপাশে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ছোট-বড় নানা ধরনের শিল্প কল-কারখানা। ধারণা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ বাংলায় একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে।