Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের কারসাজিতে হাতিয়ে নেয় বাজির লক্ষ লক্ষ টাকা

মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের কারসাজিতে হাতিয়ে নেয় বাজির লক্ষ লক্ষ টাকা

২০১৭ সালের দিকে অনুষ্ঠিত বিপিএল। ১৭ নভেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিলেট সিক্সার্স এবং বিপরীতে রাজশাহী কিংস। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার নিকট তথ্য চলে যায়, জুয়াড়িরা মাঠে বসেই জুয়া খেলায় মেতে উঠেছে। অভিযান চালিয়ে সেই সময় গ্যালারি হতে ৭ জনকে আটক করে শাখাটি।

ইসমাইল হায়দার মল্লিক যিনি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের তৎকালীন সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন তিনি বিপুল সংখ্যক জুয়াড়িদের আটক করার বিষয়ে জানান, ঐ সকল জুয়াড়িদের মধ্যে ৬৫ জনই ছিল বাংলাদেশি, ১০ জন ছিল ভারতীয় নাগরিক এবং দুই জন অন্য দেশের ছিল। তাদের সেই সময় পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল। তারা মোবাইলে জুয়া খেলা চাড়াও থ্য পাচার করতো বলে অভিযোগ ছিল।

প্রশ্ন করা হতে পারে, তারা কী ধরনের তথ্য পাচার করছিলেন? মজা এখানে, টেকনিশিয়ানরা বলছেন, মাঠের খেলা টেলিভিশনসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আলাদা আলাদা সময়ে লাইভ আসে এবং সেই সাথে একটু দেরিতে। কারণ ‘স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ডিসটেন্স’ সর্বনিম্ন হয়ে থাকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টিও রয়েছে। মাঠ থেকে ধারন করা ভিডিও সম্প্রচারকারী সংস্থার টেলিভিশনে পৌঁছানোর সময় বেশ কিছুটা হেরফের হতে দেখা যায়। এটি টেলিভিশনের চেয়ে ফে’সবুক, ইউটি’উবে বেশি।

বাংলাদেশের একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি-স্পোর্টসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সাইফুল ইসলাম জানালেন, ‘স্যাটেলাইট টু স্যাটেলাইট ভিডিও আসতে সময়ের হেরফের হবে দুই সেকেন্ড। বাড়ির টিভি পর্যন্ত সেটা পৌঁছতে পারে পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড পর। আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বা ফে’সবুক, ইউটি’উব, টু’ইটারে ভিডিও আপলোড হবে অন্তত ৩০ সেকেন্ড পর। এখানে আমাদের হাতে কিছু নেই। পুরোটাই প্রযুক্তির ব্যাপার। আশার কথা, প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো মাঠের সময়ের সঙ্গেই ফেসবু’ক, ইউটি’উবে ম্যাচ দেখাতে পারব আমরা।’

ক্রিকেট জুয়া তদন্তে যুক্ত সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, জুয়াড়িরা ফায়দা লুটছে এই সময়টারই। পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড এমনিতে চোখের পলকে চলে গেলেও জুয়াড়িদের কাছে এটাই যথেষ্ট সময়। আর ফেসবুক, ইউটিউবের ৩০ সেকেন্ড মানে তো সোনায় সোহাগা। জুয়াড়িদের এজেন্ট মাঠে মোবাইল নিয়ে বসে খেলা দেখতে। কোনো বলে ব্যাটার রান নিলেন কি না, চার-ছয় মারলেন কি না কিংবা আউট হলেন কি না—এসব তথ্য ফোনে তাৎক্ষণিক জানিয়ে দেন দেশে-বিদেশে থাকা জুয়া নিয়ন্ত্রকদের কাছে। ছবির আগে চলে যায় সে তথ্য। এখন যেহেতু প্রতি বলে বাজি হয়, তাই ফাঁদে পড়ে বাজি ধরা লোকজন। তারা জানতেও পারে না, যে বলের জন্য বাজি ধরা হচ্ছে তার ফল ৩০ সেকেন্ড আগেই জুয়াড়িদের কাছে চলে গেছে। ফল জেনে বাজির রেট বাড়িয়ে-কমিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জুয়াড়িরা।

সব তথ্যই কি মাঠ থেকে যথাসময়ে পেয়ে যায় জু’য়া নিয়ন্ত্রণকারীরা? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাখ্যা, একটি ম্যাচের যে কয়েকটি বল বা তথ্যের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে থাকে, সেগুলোতে হয়তো জুয়ায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের একটা অংশের কিছুটা লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু জুয়াড়িরা মাঠ থেকে তথ্য জেনে যখন বাজির রেট বাড়িয়ে দেয়, তখন একবারেই চলে যায় সব অর্থ।

এমনই এক ঘটনা কলকাতা পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দাদের চোখে পড়ে ২০১৯ সালে ইডেনে ভারত-বাংলাদেশ গোলাপি বলের টেস্টে। ম্যাচে ইনিংস ও ৪৬ রানে যাচ্ছেতাইভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ। তাতে বয়েই গেছে জুয়াড়িদের। কোন বলে কী হচ্ছে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বেটিং ওয়েবসাইটে তুলে দিচ্ছিলেন মাঠে থাকা তিন জুয়াড়ি শম্ভু দয়াল, মুকেশ গোরে ও চেতন শর্মা। সময় আর বুদ্ধির অভূতপূর্ব মেলবন্ধন দেখছিলেন গোয়েন্দারা। ম্যাচ চলার সময়ই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের।

বিভিন্ন এজেন্ট দিয়ে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পীরবাড়ি এলাকার ছোট্ট কনফেকশনারির দোকানি সাব্বির মিয়া অল্পদিনেই হয়েছেন কোটিপতি। গত ২২ মে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন সাব্বির।

আর সিআইডির অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, কক্সবাজারে ৩০টি গ্রুপ জড়িত এমন জুয়ায়। পুরান ঢাকায় আবার ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অংশ নিচ্ছেন ক্রিকেট জুয়ায়। তাঁদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আইনের ফাঁক গলে বেরও হয়ে যাচ্ছেন সহজে।

আইনের এই ফাঁকি প্রসঙ্গে কামরুল আহসান যিনি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি বলেন, জুয়া আইন প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। ক্যাসিনো শব্দের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে। ১০০ বা ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই দেশি-বিদেশি যে সমস্ত জুয়াড়িরা রয়েছে তারা ধরা পড়লে তাদের দিতে হয় সামান্য পরিমাণ জরিমানা। তিনি বলেন, “এখন আমি জালিয়াতিসহ অন্যান্য মামলা দিয়ে জুয়াড়িদের জুয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। যেভাবেই হোক না কেন, দেশে মানি লন্ডারিং বন্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য।’

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৫০ রান করা আজহার হোসেন শান্তু টেলিভিশনসহ জনপ্রিয় তিনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাত থেকে ৩০ সেকেন্ড পরে মাঠের খেলা সম্পর্কে জুয়া খেলার তথ্যে অবাক হয়েছিলেন। তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি প্রথম বিষয়টি জানতে পারি। আমি জুয়া ও জুয়াড়িদের যে আগ্রাসন চলছে সেটাকে পুরোপুরি বন্ধ করতে চাই। মোবাইল ফোন যেটা অনেকটা মিনি কম্পিউটার সেটা এখন জীবনের একটি অংশ। এর পরও দর্শকদের মোবাইল ফোন ছাড়া মাঠে আসতে বলা যায় কি না, সেটা নিয়েও চিন্তা করা হচ্ছে.

About

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *