ওডিআই বিশ্বকাপ-২০২৩-এ ভারতের ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন তারকা ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সামি। ভারতকে অপরাজিত রেখে ফাইনালে নিয়ে যাওয়াও সমীরের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের স্বপ্নের হার সামি-সহ গোটা ভারতকে কাঁদিয়েছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর সামির ২২ গজের অভিজ্ঞতা বিতর্কের জন্ম দিলেও সামি পণ্ডিতের ভূমিকায় সবকিছুর জবাব দেন।
বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে ঘটে যাওয়া ‘সিজদা’ নিয়ে নীরবতা ভেঙে দিয়েছেন মোক্ষম জবাব। টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর, শামি কয়েক মুহুর্তের জন্য হাঁটু গেড়ে বসেন, তারপরে অনেক পাকিস্তানি বলতে শুরু করেন যে ভারতীয় বোলার সেজদা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভয়ে তা করেননি। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ১৩তম ওভারে কাসুন রাজিথাকে আউট করে সামি তার পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন।
এ নিয়ে অ্যাজেন্ডা আজ তাক-এ মোহাম্মদ সামিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি যখন পাঁচ উইকেট নেওয়ার পরে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন, তখন অনেক পাকিস্তানি প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ বিষয়ে তারা বলেছিলেন, ‘দেখুন সামি একজন ভারতীয় মুসলিম, তাই তিনি ভয়ে সাজদা করতে পারেননি।’ এ প্রশ্নের জবাবে সামি বলেন, ‘কেউ যদি সিজদা করতে চায় তাহলে তাকে বাধা দেবে কে? যদি আমাকে করতে হয়, আমি এটি করব। এতে সমস্যা কোথায়? আমি একজন মুসলমান। আমি গর্ব করে বলি আমি মুসলিম। আমি একজন ভারতীয় এবং গর্ব করে বলি যে আমি একজন ভারতীয়। ভাই, আমার এখানে কোনও সমস্যা হলে ভারতে থাকা উচিত ছিল না। আমার যদি সিজদা করার জন্য কারও অনুমতি লাগে, তাহলে আমি এখানে থাকব কেন? মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক আপত্তি করেছিল যে আমি সিজদা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করিনি। আমি কি আমার জীবনে আগে কখনও মাঠে এটি করেছি?’
সামির জবাবের পর সব বদলে গেল। সামিকে প্রশ্ন করা অনেকেই অবশেষে তাদের ভুল ভাঙলেন। সামি আরও বলেন, “‘এর আগেও পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলাম। আমি তখন সিজদা করিনি। কিন্তু যেদিন আমাকে সিজদা করতে হবে, সেদিন কেউ বাধা দেবে না। সিজদা কোথায় করতে হবে বলুন? আমি ভারতের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে এটি করব। এই মানুষগুলো শুধু পরচর্চা করতে ভালোবাসে। তারা শুধু আলোচনা করার জন্য বিষয়বস্তু চায়, তা যাই হোক না কেন।’
ভারতীয় দলের ফাস্ট বোলার আরও বলেন, ‘আমি সম্ভবত সেই ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে পঞ্চম উইকেট নিয়েছিলাম। দারুণ গতিতে বোলিং করছিলাম। আমি বলটা সীমার বাইরে ছুড়ে দিচ্ছিলাম। উইকেট পড়তে থাকে এবং তিন উইকেট নেওয়ার পর আমি ভেবেছিলাম ৫ উইকেট নিয়ে এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। তখন আমি বোলিং করে ২০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, ১০০ শতাংশ নয়। আমি ক্লান্ত ছিলাম ক্লান্তির কারণে পঞ্চম উইকেটে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলাম। মানুষ এর থেকে বিভিন্ন অর্থ বের করতে থাকে। আমি মনে করি যারা এই ধরনের জিনিস তৈরি করে তাদের অন্য কোন কাজ নেই।’
সামির এই বক্তব্যের পর সেদিন মাঠে থাকা পাকিস্তানি ভক্তরা যারা সামির হাঁটু গেড়ে বসে পড়ার কথা বলেছিল, সামি সেই পাকিস্তানিদেরও বুঝিয়েছিলেন যে শুধু ২২ গজ নয়, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য নিজের মনের অনুভূতিই যথেষ্ট। কারণ সৃষ্টিকর্তা সবার মনের খবর রাখেন।