বাংলা ছোট পর্দার নব্বইয়ের দশকের বেশ সাড়া জাগানো একজন অভিনেত্রী শাহানাজ খুশি। টিভি সিরিজের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরব হতে দেখা যায় তাকে। সেখানে ভক্তদেরর কাছে জীবনের নানা ঘটনা শেয়ার করে থাকেন তিনি। আর এরই জের ধরে সম্প্রতি আরেকটি ঘটনা শেয়ার করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-
ছবিটা ফেসবুকে কেউ একজন দিয়েছিল, বেশ কিছুদিন আগে। এর সাথে আমাদের জীবনের এক যুদ্ধরত সময়ের প্রচুর মিল! এ ছবিটা দেখি আর, বুকের ভেতর অস্থির লাগে আমার। বাচ্চাদের স্কুলে দিলাম। আমাদের গাড়ি নাই। ফ্রী-স্কুল স্ট্রীটে বাসা। স্কুল ছিল ইস্কাটনে। প্রথমে কিছুদিন রিক্সায় যাতায়াত ছিল। কিন্তু অল্প সময় পরে,বাংলামটরে রিক্সা বন্ধ করে দেয়!
মোড় পার হতে দিত না! যাওয়া আসায়, দুইবার সিএনজির খরচ বহন করার সামর্থ্য ছিল না। তাই বাংলামটর পর্যন্ত রিক্সায় এসে, দুইজনের ব্যাগ দুই কাঁধে, আর দুই হাতে দুজনার হাত ধরে, মোড় পার হয়ে, হেঁটে AG Church স্কুলে যেতাম।
অনেকটা রাস্তা। মোড়ের এপার থেকে রিকশা অজুহাতে আসতো না। না হলে বেশি ভাড়া হাঁকতো! প্রচুর রিক্সা-গাড়ির ভিড়ের মধ্যে দিয়ে, দুই ব্যাগের ব্যাপক ওজন কাঁধে করে,আর দুই হাতে সন্তান প্রেম, আর প্রাণের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়ে সে এক অক্লান্ত যুদ্ধ!
দু-হাত বন্ধ থাকায়, ঘাম মুছতে পারিনি,ওড়না পড়ে গেলে, তুলে ঠিক করতে পারতাম না! মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে,বাবুদের বলতাম, ‘ওড়নাটা ঠিক করে দাও তো বাবা’
ওদের স্কুলে দেওয়ার কাজটা বেশির ভাগ দিনই অফিসে যাওয়ার আগে ওর বাবা করতো। আনাটা আমি। কত ঝড় বৃষ্টি, প্রখর রোদে ছিল এ পথচলা আমাদের। কোনদিন দমে যাইনি! প্লে থেকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত, প্রায় ৯ বছর চলেছে এ যুদ্ধু আমাদের। ওর বাবার দীর্ঘদিন কাঁধে ব্যাথা ছিল! রোদে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মুখ,আর গলা/হাত রোদে পুড়ে কালো ছিল! এ ছিল আমাদের ভালবাসার বলীদান, সততার অগ্নীপরীক্ষা।
মাঝে মাঝে নিজের এসব অগ্নীপথের গল্প, ছিঁটে-ফোঁটা শেয়ার করি। শুধু এটা বোঝানোর জন্য যে, জীবন স্বপ্নের মতো সহজ এবং সুন্দর না! জীবনের অলিগলিগুলো সাধ্যের চেয়েও কঠিন কখনও কখনও…
দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে অংখ্য জনপ্রিয় ‘নাটক’ উপহার দিয়ে বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। করোনা সংক্রমনের ফলে দীর্ঘ বিরতী কাটিয়ে আবার অভিনয়ে ফিরেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের অভিভাবক শাহানাজ খুশি।