শোবিজ অঙ্গনের চেনা মুখ দিলারা জামান। তিনি বাংলাদেশের অসংখ্য নাটক এবং সিনেমায় অভিনয় করেছে। তার অভিনয় জগতের ক্যারিয়ারে তিনি অর্জন করেছেন ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। তার অভিনীত নাটক এবং সিনেমা গুলো দর্শক মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। সম্প্রতি তার দিনকাল সম্পর্কে বেশ কিছু কথোপকথন হলো এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান। টেলিভিশন ও রূপালী পর্দায় জনপ্রিয় মুখ। অভিনয় ভূবনে তার পথচলা দীর্ঘদিনের। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তার বাস্তবধর্মী চরিত্র তাকে দর্শকদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে দিয়েছে। কখনো বদরাগী দাদী, কখনো স্নেহময়ী মা বা দায়িত্ববান স্ত্রীর চরিত্রগুলোতে তার অভিনয় অনবদ্য। কেমন আছেন দিলারা জামান? দিনকাল কেমন চলছে? গুণী এই অভিনেত্রীর স্বভাবসুলভ বিনয়ী উত্তর- আল্লাহুর রহমত আর সবার দোয়ায় ভালই আছি। শুধু হাঁটুর ব্যাথায় মাঝে মাঝে কষ্ট পাই।উপরওয়ালার কাছে লাখো শুকরিয়া এই ৮০ বছরেও অভিনয় করে যাওয়ার শক্তি দিয়েছেন। আর তরুণ নির্মাতা, সহশিল্পী ও নাট্যকারদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে কাজের মধ্যে রেখে উজ্জীবিত রেখেছেন। আমিও তাদের সাথে কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে তরুণী হয়ে যাই। একা যখন থাকি চিন্তা করি ৮০ বছরের একজন শতভাগ গৃহিনী কেমন করে সময় অতিবাহিত করেন। সত্যি শিল্পী জীবন আমাকে ধন্য করেছে। আমি একজন অভিনয় শ্রমিক।
আপনার কাজের ব্যাস্ততা কেমন চলছে? দিলারা জামান বলেন, চলছে ভালোই। তবে মনটা অনেক খারাপ লাগছে। গত রাতে অনেক কেঁদেছি। আমার বড় মেয়েটি দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে আমার কাছে বেড়াতে এসেছিল। কিভাবে যে সময় গড়িয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। সে আগামীকাল ফিরে যাচ্ছে। আমার মেয়ের জন্য একটি সিনেমা ও বেশ কিছু নাটকের কাজ ফিরিয়ে দিয়েছি। মেয়েকে সময় দিয়েছি, ভালো মন্দ রান্না করে খাইয়েছি, ঘুরে বেড়িয়েছি। সে চলে যাচ্ছে, আবার কাজ শুরু করবো হয়তো। সম্প্রতি ‘গুণীন’ এ কাজ করেছি গিয়াসউদ্দিন সেলিমের। এ সিনেমায় কি চরিত্রে অভিনয় করেছেন? এ অভিনেত্রী বলেন, ছবিতে আমার চরিত্রের নাম হালিমা। তার কোন ছেলে সন্তান নাই। আমার একটিমাত্র মেয়ে। আর পরীমনি আমার নাতনী।
আমাদের গ্রামের সমাজ ব্যবস্থায় আজও পুত্র সন্তান না থাকলে মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। এমনও হয় সেই মাকে সম্পত্তি থেকে বে-দখলও করা হয়। আমি এমনই একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি গ্রামের মিয়া বাড়ির বউ। আমার দেবরের সন্তানরা আমার স্বামীর সম্পত্তি দখল করে নিতে চায়। তাদের এই চক্রান্ত থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়ে গুণীন এর কাছ থেকে কুফুরী কালাম এনে আমাকে দেয়। তখন আমি আমার মেয়েকে বলি কেন তুই গুণীন-এর কাছে গেলি, তুই কি মিয়া বাড়ির মানসম্মান নষ্ট করবি! ঘটনাচক্রে তখন আমি বলি আমিও একজন গুণীন। ঝাড়ফুঁক তাবিজ আমিও দিতে পারি। সেলিম ৫০ দশকের গল্পকে সুন্দর করে সিনেমায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। তার কাজ সত্যিই প্রশংসারযোগ্য।
আপনিতো একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বাইরে একজন সফল মডেল? বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে জানতে চাই?দিলারা জামান হাসতে হাসতে বললেন, সবই হলো মানুষের ভালবাসা। মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে প্রচুর ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। একজন মডেলের চেয়ে অভিনেত্রী দিলারাকে সবাই পছন্দ করেন। অভিনেত্রী দিলারাই অমর হয়ে থাকবে। একদিন আমি থাকবো না। কিন্তু অভিনেত্রী দিলারা মনে করিয়ে দেবে আমি ছিলাম, আছি এবং থাকবো সৃষ্টির মধ্য দিয়েই।
১৯৬৬ সালে “ত্রিধরা” নাটকে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বিনোদন জগতে যাত্রা শুরু করেন এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান। এবং তার অভিনীত প্রথম সিনেমা “চাকা”। তিনি তরা কাজের মধ্যে দিয়ে দর্শক মনে বিশেষ জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি তিনি অর্জন করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।