Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Entertainment / মাঝরাতে থানায় অভিনেত্রী ববিতা, ভক্তের কাছ থেকে নিয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকা

মাঝরাতে থানায় অভিনেত্রী ববিতা, ভক্তের কাছ থেকে নিয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকা

অভিনেতা বা অভিনেত্রী সব সময়ই থাকেন সাধারণ মানুষের কাছে একটি আকর্ষণের বিষয়। বলতে গেলে ভক্তরাই একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের জীবনের সব থেকে বড় সম্পদ। কিন্তু অনেক সময় এই ভক্তদের কারণেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তারকাদের। যার রয়েছে অনেক উদাহরণ।

যেমন, ভারতীয় সিনেমার চিরসবুজ নায়ক দেব আনন্দ সম্পর্কে বোম্বে (মুম্বাই) আদালতের একটি অদ্ভুত নির্দেশ ছিল, যিনি কালো পোশাকে বাইরে যেতে পারবেন না। কারণ, কালো পোশাক পরলে তাকে দারুণ দেখাবে। তিনি ইতিমধ্যেই স্মার্ট এবং সুদর্শন। কালো রঙের বিপরীতে তার গায়ের চামড়ার উজ্জ্বল রঙ উঠে এসেছে। চোখের সামনে এমন ঝকঝকে মুখ দেখে দুর্ঘটনা ঘটাতেন মহিলারা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। জনপ্রিয়তার জোয়ার থামাতে অবশেষে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

এটি দেব আনন্দের অতীতের গল্প। অন্যদিকে বাংলাদেশে একজন নায়িকাকেও পিষ্ট হতে হয়নি। একজন উন্মাদ ভক্তের হয়রানি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি কিছুক্ষণ আত্মগোপনে চলে গেলেন, তারপর গোপনে চলাফেরা করতে লাগলেন। এতে কাজ না হওয়ায় তিনি বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে চলে যান। এরপরও রেহাই পাওয়া যায়নি, শেষ পর্যন্ত ওই ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আসলে স্টারডমের অনেক বিড়ম্বনা আছে। কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, কিছু ভক্তের আগ্রহের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনের ছোট-বড় ঘটনাও চলে আসে সবার সামনে। যাকে নিয়ে এতদিন এই অবতার, তিনি আর কেউ নন এপারের কিংবদন্তি নায়িকা সত্যজিৎ রায়ের অনঙ্গ স্ত্রী ববিতা।

আজকের গল্প শুরু করার আগে ববিতার টাকটুজির একটু ঢালাই করে নেওয়া যাক। তার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। জন্ম ৩০ জুলাই ১৯৫৩, যশোরে। তবে বড় হয়েছেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। বাবা নিজামউদ্দিন আতাউর ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, মা বেগম জাহানারা ছিলেন চিকিৎসক। পপির অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। বড় বোন সুচন্দার স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের অনুপ্রেরণায় ‘সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে নাম লেখান তিনি। ওই ছবিতে তার বাবা ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক এবং মায়ের ভূমিকায় ছিলেন বোন সুচন্দা। ‘সংসার’ ছবির পর জহির রায়হান ‘অবশেষে’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে পপিকে কাস্ট করেন। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট। সেদিন পপির মা মারা যান। তিনি তখনও ববিতা হয়ে ওঠেননি, তবে পপি নামে পরিচিত ছিলেন। ‘সংসার’-এর কয়েক বছর পর, প্রযোজক আফজাল চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জহির রায়হানের পরবর্তী ছবি ‘জলতে সুরজ কি ভালো’-এর নায়িকা হিসেবে ববিতাকে নাম দেন। তারপর দিনে দিনে তিনি হয়ে ওঠেন হার্টথ্রব নায়িকা, বাংলা সিনেমার প্রাণশক্তি।

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাকালে ববিতা বিয়ে করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ইফতেখার আলমকে। একমাত্র ছেলে অনিক আসে তাদের ঘর আলো করতে। ১৯৯৩ সালে অনিকের বয়স যখন ৩, স্বামী ইফতেখার আলম মারা যান। এরপর থেকে ববিতার জীবন আবর্তিত হয় তার ছেলে অনিককে ঘিরে। কানাডায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া শেষ করে অনিক এখন একটি কোম্পানিতে কর্মকর্তা। ববিতা বছরের বেশির ভাগ সময় কানাডায় কাটান, ছেলেকে নিয়ে।

ওই ববিতা ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে এক ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে গুলশান থানায় আসেন। শরিফুল হক সিদ্দিকী গুলশান থানার ওসি ছিলেন। রাতে ববিতাকে থানায় দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। ববিতা লিখিত অভিযোগ করে জানান, এসএম জহিরুল আলম নামে এক ভক্ত তার জীবন বিষিয়ে দিয়েছেন। লোকটি দিনরাত তাকে অনুসরণ করছে। ঘরের আশেপাশে দাড়িয়ে, মাঝে মাঝে ফোন করে, পিছন পিছন কথা বলে। গৃহকর্মীদের ডেকে দামি উপহার পাঠায়। তার অত্যাচারে বাড়িতে কোনো কাজের মেয়ে নেই।

পরদিন ববিতার অভিযোগের কপিও আমার কাছে পৌঁছে। ববিতা জানান, ওই ব্যক্তিকে তিনি দুই বছর ধরে চেনেন। প্রথমে পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ডাকলেন ভক্ত। শুরুতে ববিতা মনে করতেন, দশজন ভক্ত একই। কিন্তু ধীরে ধীরে লোকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একদিন ফোন করে ববিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ববিতা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ওই ব্যক্তি ববিতার ছোট বোন চম্পার স্বামী সহিদুল ইসলাম জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করেন। এমনকি তার কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। সেটাও কাজ করেনি। একপর্যায়ে পাইলট ইকবালের সঙ্গে দেখা হয় ববিতার ভাইয়ের। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা পরিবারে। এরপর ওই ব্যক্তি একটি দৈনিককে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, ববিতার সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ কেটে গেছে। ববিতাকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছেন তিনি। বিদেশ ভ্রমণ খরচ বাবদ ববিতাকে ১০ লাখ টাকাও দেন তিনি।

ববিতা তার অভিযোগে আরও বলেন, ওই ব্যক্তি এখন তার বাড়ির পাশের রাস্তায় দিনরাত লোকজন নিয়ে বসে থাকে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাকে অনুসরণ করছে। ওই ব্যক্তির অত্যাচারে তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্য ভাড়া বাড়িতে চলে যান। এরপর ওই ব্যক্তি ববিতার নিজের খালি বাড়ি ভাড়া নিতে নানা কৌশল করে। পরে অনেক কৌশলে ইউএনডিপিকে বাসা ভাড়া দেয় ববিতা। তবুও পিছু হটেনি লোকটা। আজও থানায় এসে দেখেন লোকটা থানা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ববিতার অভিযোগের ভিত্তিতে গুলশান থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

মামলাটি তদন্ত করছিলেন গুলশান থানার সেকেন্ড অফিসার মকফুবর রহমান সুইট। তিনি এখন এসপিবিএনে গণভবনে কর্মরত। মিষ্টি একদিন আমাকে বলেন, ববিতার ভক্ত ও এ মামলার আসামি এসএম জহিরুল আলম কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন, তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক। এর আগে তিনি শিল্প ঋণ কোম্পানিতে উর্ধ্বতন পদে ছিলেন। লোকটি তিন সন্তানের জনক এবং অনেক সম্পদ রয়েছে। ভাবলাম, এমন লোক কেন এমন করবে!

মিষ্টির কাছ থেকে আসামিদের হদিস জানার পর আমি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে যাই। সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, জহিরুল তিন দিন ধরে অফিসে আসছেন না। আমি তার পিয়নের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে লালমাটিয়ায় জহিরুল আলমের বাসায় যাই। তিনি বাড়িতে ছিলেন। পরিচয় হওয়ার পর কথা বললেন। নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, সংসার নিয়ে কথা বলেছেন। জহিরুল আলমের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে। ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিক। লালমাটিয়ায় নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন। সে এমনভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয়নি। তিনি আমাকে বারবার বলেছেন যে তার প্রথম স্ত্রী ববিতাকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেন। তাও কাগজে লেখা। আমি বললাম, ববিতার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে? তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর ববিতা একা থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রেমের কাছে হেরে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। চার বছর ধরে তারা কমপক্ষে ২০ বার দেখা করেছে। এক সপ্তাহ আগে ববিতা লোক পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা নেন। জহিরুল আলম বলেন, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝা কঠিন।

প্রসঙ্গত, ৩ নভেম্বর (২০০১) জহিরুল আলমকে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে এসেও আমাকে একই কথা বলেছে। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় একবার তার সাথে দেখা হয়েছিল। দেখলাম সে খুবই স্বাভাবিক, তার কথায় কোনো দ্বিধা নেই।

জহিরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিন পর তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জারি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী সুইটের সঙ্গে কথা হলে সুইট জানান, জহিরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাদী ববিতা কখনো আদালতে যাননি। জহিরুল বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলা থেকে খালাস পান। এরপর জহিরুলের আর কোনো খবর জানতেন না মিষ্টি। ওই ব্যক্তি কতদিন কারাগারে ছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি।

ঘটনাটি জানাতে গিয়ে ববিতার সঙ্গে দুবার কথা বলেছি। আমি বৃহস্পতিবার আবার যোগাযোগের চেষ্টা করে শুনেছি যে তিনি কানাডায় তার ছেলের সাথে আছেন।

অনেক দিন পর সেই ঘটনার কথা লিখতে গিয়ে একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ল। সেদিন লোকটির সাথে কথা বলার সময় এবং লালমাটিয়ার বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় সে আমার হাত ধরে খুব মিনতি করে বললো, ‘ভাই, আমি ববিতাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। এর জন্য জেল হলেও মেনে নেব।

জহিরুল আলমকে আমার কাছে খুব অদ্ভুত, একটু অদ্ভুত লাগছিল। আজ এত বছর পর মনে হচ্ছে মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত, বড়ই অনিয়ন্ত্রিত। সময়ের সাথে সাথে, এটি ভেঙে যায় এবং পুনরায় যোগ দেয়। সেই মন কখন, কোন দিকে মোড় নেয়, স্রষ্টা ছাড়া কেউ জানে না।

প্রসঙ্গত, এ দিকে এই ঘটনাটি অনেক দিন আগের হলেও নতুন করে আবার উঠে এসেছে সাংবাদিকের কলমে।তবে বর্তমানে সেই ববিতা আর নেই। সিনেমায় কাজ ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। নিজের এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে এখন দিন কাটাচ্ছেন ববিতা।

About bisso Jit

Check Also

গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি, জানা গেল কনের পরিচয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যখন সারা দেশের মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন বেশ নিরব ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *