পরকীয়ার জেরে এই পর্যন্ত অনেক দম্পতির দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙেছে। দাম্পত্য কলহ থেকে শুরু করে হতাহতের ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। বহির্বিশ্বের অনেক দেশে পরকীয়া সম্পর্ক কে বৈধ ঘোষণা করলেও বাংলাদেশ এটি অবৈধ এবং ঘৃন্য একটি কাজ বলে মনে করা হয়।
সম্প্রতি পাবনার চাটমোহর উপজেলায় পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন হেলাল উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে দম্পতিকে শিকল দিয়ে আটকে রাখে।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের উদ্ধার করেন।
প্রেমিক হেলাল উদ্দিন ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি এক সন্তানের জনক। তার প্রেমিকা চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করোকোলা গ্রামের সুমন আলীর স্ত্রী। তিনিও এক সন্তানের মা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হেলাল উদ্দিন ও ওই নারীর মধ্যে প্রায় তিন বছর ধরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চলে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সাথে দেখা করেছেন এবং একা সময় কাটাতেন। শুক্রবার রাতে ওই নারী হেলালকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন লক্ষ্য করেন। তারা ওই মহিলার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারা দুজনকেই আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের বেঁধে রাখে।
শনিবার সকালে স্থানীয়রা নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরজাহান বেগম মুক্তিকে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি গ্রাম পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যান। চেয়ারম্যান দম্পতিকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন।
এরপর বিষয়টি অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুলকে জানানো হয়। শনিবার বিকেলে নিমাইছড়া ইউনিয়ন পরিষদে এ সালিশের আয়োজন করেন দুই ইউপি চেয়ারম্যান। সেখানে ওই দম্পতি, তাদের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ওই নারীর স্বামী সুমন আলী সালিশ থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে সংসার হবে না। পরে নিমাইছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তাকে মির্জাপুর বাজার থেকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সভায় ফিরিয়ে আনেন। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্তে জানানো হয়, স্ত্রীকে তালাক দিলে সুমনকে কাবিনের এক লাখ টাকা দিতে হবে। সুমন সেই টাকা দিতে না পেরে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। অপরদিকে পরকীয়া প্রেমিক হেলালের বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই নারীর স্বামী সুমন আলী বলেন, আমি প্রথমে আমার স্ত্রীকে নিতে চাইনি। পরে এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিতে হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।
এ বিষয়ে নিমাইছড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, পরিষদে বিচার শেষে হেলালকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল জানান, তিনি সালিশের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবস্থান নেন। এরপর কি হল জানি না।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমতাজ মহল বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। এ ব্যাপারে নিমাইছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করেছেন।
উল্লেখ্য, গৃহবধুর সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরেও শুধুমাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয় ওই যুবককে। নিজের বাড়িতে ফিরে যান ওই গৃহবধূ। গ্রাম্যশালিসে এমন বিচারে অনেককে সন্তুষ্ট হলেও অসন্তুষ্ট হয়েছেন অনেকেই। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে ওই গৃহ বধূকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।