তখন মধ্যরাত। নিজের জমিতে হঠাৎ করে অন্যের নামে সাইনবোর্ড দেখে হতবাক মোহন ও তার বোন হাসনা বানু। সাইনবোর্ডে লেখা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজির নাম। জমির মালিক মোহন থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে সাইনবোর্ডে ডিআইজির নাম দেখে নীরবে চলে যায়।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। তিনি সিআইডির বরিশাল বিভাগে কর্মরত। ঢাকার মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে বসে।
জানা গেছে, লাগোয়া মেরাদিয়ার দক্ষিণ বনশ্রী আবাসিক এলাকায় মোহন ও হাসনা নামে দুই ভাইবোনের ৩৩ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমিটি বেদখল করে অপরাধ করেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল।
মধ্যরাতে অন্যের জমিতে নিজের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখলের এমন অভিযান চালানোর ঘটনায় পুলিশ কোয়ার্টারেও তোলপাড়। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসার পরদিন ওই জমি থেকে সাইনবোর্ড অপসারণ করেন ডিআইজি। এসময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র বলছে, সিআইডি সদর দফতর ওই কর্মকর্তার জমি দখলের চেষ্টার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাচ্ছে।
ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে সিআইডি শফিকুল জমিতে সাইনবোর্ড লাগানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাতে সাইনবোর্ড লাগাব কেন? সেদিনই সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলাম। জমির মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় সাইনবোর্ডটি সরিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘সাইনবোর্ডে বর্ণিত তপশিলে জমির মূল্য ৩৫ লাখ টাকা ধরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বায়না করেছি।’
সাইনবোর্ডে সমপরিমাণ জমির মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলা হলেও এলাকার জমি বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
জমির মালিক মোহন ও হাসনা জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। এতে লেখা ছিল, বায়না মোতাবেক এ জমির মালিক অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলামের। জমির বিবরণ উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও যোগ করা হয়েছে।
খবর পেয়ে মোহন-হাসনাসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে হামলার শিকার হন। নিখোঁজ হওয়ার হুমকি দেয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিআইডি কর্মকর্তা শফিকুল। তিনি বলেন, কাউকে হুমকি দেওয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল দেড়টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রীর ইস্টার্ন বনভিথি শপিং কমপ্লেক্সের (১০ তলা মার্কেট) পেছনে জমি দখল করা হয়। এসময় চিৎকারে স্থানীয় অনেকেই ঘটনাস্থলে যান। তবে পুলিশ কর্মকর্তার নামে সাইনবোর্ড দেখে এলাকার লোকজন সরে যায়।
তবে রাতে খিলগাঁও থানায় খবর দেওয়া হলে একটি টহল দল আসে। এরপর দখলে আসা লোকজন স্থান ত্যাগ করে। কিন্তু সাইনবোর্ড রয়ে গেছে।
খিলগাঁও থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। জমি থেকে সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে খিলগাঁও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে জমি থেকে সাইনবোর্ডটি অপসারণ করা হয় বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল বলেন, ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার পর যে ব্যক্তি ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন তার কাছ থেকে তিনি টাকা ফেরত নেবেন।