নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামের মৃত নওশের ফকিরের ছেলে মিনহাজ আলী ২০০৮ সালে মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে ভারত যান। এরপর তাঁর কোনো খোঁজ-খবর না পাওয়া যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা সংশ্লিষ্ট থানায় যেয়ে জিডি করিয়ে আনেন ও নানাভাবে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো অবস্হাতেই তাঁকে খুঁজে না পাওয়ায় একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তাঁরা। নিখোঁজের দুইবছর পর ২০১০ সালে মৃত্যু হয় মিনহাজ আলীর স্ত্রীরও৷ অবশেষে চৌদ্দ বছর পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় স্ত্রী সহ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে সমর্থ হন মিনহাজ আলী।
জানা যায়, মাছের ব্যবসা করতে ভারত যাওয়ার সময় স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান।সেখানে গিয়ে তিনি হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি ও থানায় জিডি করেও তাকে ফিরে পায়নি তার পরিবার। সে নিখোঁজ হওয়ার ২ বছর পর তার স্ত্রী নার্গিস বেগম মারা যান।
হঠাৎ ১৪ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)আরও দুই ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে নিজ বাড়ি ফিরে আসেন মিনহাজ আলী। দীর্ঘ ১৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পেয়ে মা হারা সন্তানরা খুব খুশি। মিনহাজের বর্তমান বয়স ৫০ বছর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিনহাজ তার ২য় স্ত্রী, বড় মেয়ে-জামাই, বড় দুই ছেলে-ছেলের বউ ও ছোট আরও দুই ছেলে মিলে বসে আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন। তার পরিবারও তাকে পেয়ে খুশি। তার ছোট সন্তানদের আদর করছেন তার বড় সন্তানরাসহ অনেকে। এদিকে এত বছর পর বাড়িতে ফিরে আসায় তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড়ও করছেন গ্রামের মানুষ।
এ বিষয়ে কথা হয় বড় ছেলে শান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, আব্বা ব্যবসা করতে গিয়ে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। দুই বছর পর মা মারা যান’
পরিবার ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মিনহাজ আলী বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে হারিয়ে যাই। বর্ডার পার হলে বিএসএফ’র সদস্যরা আমাকে ধরে জেলে বন্দী করে। পরিবারের লোকজন খোঁজ খবর নেয় না দেখে আমাকে ছেড়ে দিলে ঢাকায় এসে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করি। নিজেকে একা একা লাগে ভেবে ২য় বিয়ে করি। এতোদিন পরে আগের পরিবারকে ফিরে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেশের সীমানা পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যাওয়া এমন অনেকের খোঁজই শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। মিনহাজ আলীর এই ঘটনাটি তাই এক আনন্দদায়ী ব্যতিক্রম।