বাবা প্রয়াত হয়েছেন ২ বছর পূর্বে। বাবা প্রয়াত হওয়ার পর মা একাকী জীবন যাপন করছেন, তিনি বড়ই একা হয়ে রয়েছেন। দুটি সাবালক ছেলে রয়েছে কিন্তু তারা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন মাকে তেমন সময় দিতে পারেন না। কিন্তু এই দুই ছেলে মাকে খুব ভালোবাসেন। তারা তার মাকে বাকিটা জীবন সুখি দেখতে চান। তাই মায়ের সাথে কথা বলে, তার সম্মতি নিয়ে, তাদের মায়ের জন্য একজন সুযোগ্য স্বামী খুঁজছেন। দুই ছেলে তার পাত্র খুঁজতে ফেসবুক পেজের একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ অপূর্ব তার মায়ের জন্য একটি পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করেছেন। তিনি ‘জি অ্যান্ড টেক’ নামে একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তার বড় ভাই মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনি ব্যবসাও করেন।
ইমরান-অপূর্বর বাবা ইয়াদ আলী। দুই বছর আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যা”ন্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মা ডলি আক্তার। তার বয়স এখন ৪২ বছর। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
গত শনিবার রাত ১০ টা ১৫ মিনিটের দিকে, অপূর্ব তার মায়ের জন্য একজন জীবনসঙ্গী খোঁজার জন্য ‘বিসিসিবি ম্যাট্রিমোনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’ নামে একটি ফে”সবুক গ্রুপে একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে অপূর্ব লিখেছেন, বাবা প্রয়াত হয়েছেন। তাই মায়ের জন্য পাত্র খুঁজছি।
ছেলে তার মায়ের জন্য কেমন স্বামী চান তাও নোটিশে উল্লেখ করেছেন। আমার মায়ের সাথে মিল হয় এমন পাত্র চাই। পাত্র ঢাকার আশেপাশে হলে ভালো হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলে সমস্যা নেই।
স্বামীর পেশা চাকরি বা ব্যবসা হতে পারে। ধর্মকর্ম করা ছাড়াও পাত্র হতে হবে সরল মনের, যিনি মায়ের সারাজীবনের সঙ্গী হতে পারে। পাত্রের বয়স ৪২ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হলে ভালো হয়।
বিজ্ঞপ্তিটি এভাবে শেষ করা হয়, পরিবারটি মাকে বিয়ে করাতে চায়। বিজ্ঞপ্তির সাথে মা-ছেলে ও মায়ের একার ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে অপূর্বর সঙ্গে ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ছেলে জানান, তাঁদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে মায়ের আগে থেকেই বন্ধুর মতো সম্পর্ক। তারা সবাই তাদের বাবা প্রয়াত হওয়ার আগে থেকে তাদের বড় ভাই ইমরানের তৈরি বাড়িতে থাকেন। বড় ভাই বিবাহিত। তার পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে।
অপূর্ব বলেন, ‘বাবা প্রয়াত হওয়ার পর মা তার অনেক কথা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন না। সে অনেক কথা বলতে ইতস্তত করছিল। আমরা বড় হয়েছি। আমরা ব্যাস্ত থাকি। এ কারণে আমরা মাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি না। বড় ভাইয়ের সংসার আছে। আমিও ভবিষ্যতে বিয়ে করবো। তাহলে মা আরও একা হয়ে যাবে। তাই আমরা সকলেই চাই মায়ের একটি সুন্দর জীবন হোক। তার একজন ভালো জীবনসঙ্গী দরকার।’
অপূর্ব জানান, এ বিষয়ে তিনি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সম্মতি নিয়েছেন। বড় ভাইও রাজি। মা ও বড় ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে গত শনিবার রাতে ফে”সবুক গ্রুপে বিজ্ঞপ্তি দেন তিনি।
অপূর্ব বলেন, ‘আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে বিষয়টিকে এত দূর নিয়ে এসেছি। এখন আমাদের একটাই চাওয়া—মায়ের জন্য একজন ভালো জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া।’
অপূর্বের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় পাশেই ছিলেন ডলি আক্তার। তার সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার এক ছেলের বিয়ে হয়েছে। আরেক ছেলের বিয়ে হয়নি। জীবনে এগিয়ে যেতে একজন সঙ্গী দরকার। আমার স্বামী প্রয়াত হয়েছেন। এখন ছেলেরা আমাকে নিয়ে ভাবছে। আমি রাজি হয়েছি।’
ডলি আক্তার বলেন, তিনি একজন ভালো মনের জীবনসঙ্গী আশা করেন। যিনি তার দুই ছেলে, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে গ্রহন করবেন।
ডলি আক্তার এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলে অপূর্ব উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, মায়ের কষ্ট আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে মা ভালো না থাকলে আমরা তাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবো।’
পরিবারের অন্য সদস্যরা কীভাবে এই উদ্যোগ নিচ্ছেন জানতে চাইলে অপূর্ব বলেন, মায়ের আত্মীয়রা রাজি। তারা চায় মায়ের আলাদা জীবন হোক। বাবার পক্ষের আত্মীয়রাও দ্বিমত করেননি। তা ছাড়া মা যেহেতু মতামত দিয়েছেন তাই আর কিছু বলার নেই।
অপূর্বর মতে, সমাজে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন সবাইকে মেনে নিতে হবে।
ইতিমধ্যেই অপূর্বর বিজ্ঞপ্তিটি সাড়া ফেলেছে। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার মানুষ বিজ্ঞপ্তিতে লাইক ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। প্রায় ৫০০ ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন।
অপূর্ব বলেন বিজ্ঞপ্তিটি দেয়ার পর একে একে কমেন্ট বক্স ভরে যাচ্ছে। কমেন্টগুলো পড়ে লেগেছে। বেশিরভাগ মানুষ এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং এই ধরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মা যাতে করে একজন জীবনসঙ্গী খুজে পায়, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমার মাকেও বিয়ের বিষয়ে অগ্রিম শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছে অনেকেই।