Wednesday , December 25 2024
Breaking News
Home / Exclusive / মাইয়্যাডার সর্বনাশ হয়ে গেছে, আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে

মাইয়্যাডার সর্বনাশ হয়ে গেছে, আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে

‘আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে। মিথ্যা মামলার বাড়ি ছাড়া। ভুল কইরা ট্রেনে ওইট্যা মাইয়াডার (মেয়ে) সর্বনাশ হইছে। ঘরে বিয়ার যোগ্য এক মাইয়্যা রইছে। দুই পোলা বড় অইছে। মানুষের সামনে ক্যামনে মুখ দেহাইয়াম। মাইনস্যের কথার কি জবাব দিবাম। হের লাইগ্যা (কারণে) মাইয়্যাডারে লইয়্যা বাড়িত যাইতাম না।’ লালমনিরহাট থেকে মেয়েকে সঙ্গে করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে ফেরার পথে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলেন লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ধ*র্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ওই তরুণী (১৪) ময়মনসিংহে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনে যান। ভুল করে তিনি ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠেছিলেন। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী তার টিকিট দেখতে আসেন। টিকিট না থাকায় আক্কাস গাজী তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন।এরপর আনুমানিক সকাল সাড়ে আটটার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আসন থেকে তাকে কেবিনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে টহলরত রেলওয়ে পুলিশের একটি দল কেবিন থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে আক্কাস গাজীকে (৩২) আটক করে। মেয়েটিকে উদ্ধার করে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আক্কাস গাজী বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার মৃত বজলু গাজীর ছেলে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট রেলওয়ে পুলিশের এএসআই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে আকসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার আক্কাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে বুধবার আক্কাস গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ধর্ষিতার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের একটি গ্রামে। মেয়েটি গত দুই বছর ধরে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। মেয়েটির বাবা জয়দেবপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেসে রান্নার কাজ করেন। খুনের মামলায় ৮ মাস জেল খেটে দারিদ্র্যের কারণে ছেলেমেয়েকে নিয়ে গাজীপুরে চলে যান মেয়েটির বাবা। বড় মেয়েকে জুতার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে দেন।

শুক্রবার বিকেলে মেয়েটির বাবা ট্রেনে করে গাজীপুর ফিরছিলেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমি তাকে (মেয়েটির) চলে যাওয়ার পর মা আমাকে তরকারি কাটতে বললেন। কিন্তু সে (মেয়েটি) তা করেনি। মা তাকে বকাঝকা করতে পারে এই ভয়ে সে (কিশোরী) ঈশ্বরগঞ্জে ট্রেন ধরতে যায়। কিন্তু ভুল ট্রেনে উঠে।

মেয়ের বাবা বলেন, প্রতিদিনের রোজগার করে ঋণ মিটিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারব এই আশা নিয়ে গাজীপুরে এসেছি। কিন্তু আমার মাইয়্যাডার সর্বনাশ হয়ে গেছে। সে খুব বিমর্ষ হয়ে গেছে। কান্নাকাটি করে শুধু। আমি চাই আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তার কঠোর বিচার হোক।

তিনি বলেন, শুধু মেয়েটির জীবনই নষ্ট হয়নি, আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরীক্ষায় ফেলছেন। মানুষের নানা প্রশ্নের মধ্যে পড়তে অইবো (হবে)। অনেকেই মোবাইলে অনেক কথা বলেন। তাই ভাবছি আর কোনদিন বাড়ি যাব না। আমি মাইনস্যার (মানুষ) প্রশ্নের উত্তরও দিতাম না।

About Nasimul Islam

Check Also

দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১: পুরুষ শূন্য গ্রাম, আতঙ্কে পালিয়েছেন নারীরাও

মাদারীপুরের শিবচরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সোমবার দুপুরে হিরু মাতুব্বর নামে একজন নিহত হয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *