সাম্প্রতিক সময়ে ঠাকুরগাঁও জেলার শাকির হোসেন সৌরভ নামের এক যুবক ব্যাগভর্তি ৫ লক্ষ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছেন। কিন্তু সেটা তিনি তার প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে এলাকাজুড়ে মাইকিং করেছেন। যেটার জন্য ওই এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন ওই যুবক। তবে তিনি এখনও ঐ বিপুল পরিমাণ টাকার মালিকের খোঁজ পাননি।
কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন তার মোবাইল ফোনে মালিকানা দাবি করে ফোন করেছেন। কিন্তু সৌরভ মনে করেন যে সেগুলো ভুয়া ছিল কারণ সেগুলো বর্ণনার সাথে মেলেনি। প্রকৃত মালিক না পাওয়া গেলে তিনি এই টাকা সরকারি কোষাগারে বা গরিব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে চান। রোববার বিকেলে দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সৌরভ এ কথা বলেন।
সৌরভের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের শান্তিনগর এলাকায়। মেশিনারিজ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও নিঘাত পারভীন দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সৌরভ সবার বড়। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে শহরে ফেরার পথে পথে ব্যাগটি কুড়িয়ে পান। ভিতরে টাকা দেখে নিয়ে আসেন।
সৌরভ বলেন, ‘এই টাকাই হতে পারে কারও ব্যবসার মূল পুঁজি। হতে পারে কর্মস্থলের টাকা অথবা কারও কোনো স্বপ্নপূরণের সঞ্চয়। তাই মালিকের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া জরুরী মনে করলাম। তার জন্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’
এ সময় তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে তিনি মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অনুমতিক্রমে শনিবার দিনভর মাইকিং চলবে। কেন পুলিশে জমা দেননি মাইকিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন প্রশ্নে সৌরভের উত্তর, ‘সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে যেতে দ্বিধা করেন, ভ’য় পান। তাছাড়া টাকার মালিককে অন্য কোনো ঝামেলায় পড়তে হতে পারে- তা আমি থানায় জমা দেইনি।’ তার পরিবারের সদস্যরাও চায় আসল মালিক টাকা পান- তাই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
তবে, সৌরভ জানিয়েছেন যে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন তাকে ফোন করে টাকার মালিকানা দাবি করেছেন। তবে সঠিক বর্ণনা দিতে না পারায় তাদের ‘ভুয়া’ মনে হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে যদি সঠিক মালিক খুঁজে না পাওয়া যায়? জানতে চাইলে সৌরভ মন্তব্য করেন, ‘পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে বা অসহায়-গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেব।’
সৌরভের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমানতুল্লাহ ইসলামী একাডেমির শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সৌরভ খুবই সৎ ছিলেন। তার কোনো লোভ ছিল না। ছেলে হিসেবে খুবই ভদ্র। একজন শিক্ষক হিসেবে তার ভালো কাজের জন্য আমি গর্বিত।’
ওই একাডেমি থেকে ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেন। ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু বাবার ব্যবসায় এক বছর সময় দিতে হয়। কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। তবে পরের বছর ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে তার ডিপ্লোমা শেষ করার পর, সৌরভকে আবার তার বাবার ব্যবসায় সময় দিতে হয়েছিল।
২০১৮ সালে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। শহরের বাসস্ট্যান্ড স্টেডিয়াম এলাকায় মদিনা মেশিনারি খুচরা বিক্রির পাশাপাশি মেশিনারি ও ক্রোকারিজ সামগ্রী পাইকারি বিক্রি করে। সেখানেও তার পুঁজি সততা। সৌরভের বন্ধু গোলাম মোস্তফা বাধন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমি একই সাথে ব্যবসা করি। টাকাপয়সার কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা অনেক খুচরা দোকানে পাইকারি হারে পণ্য সরবরাহ করি। অন্য ব্যবসায়ীরা সৌরভকে বেশি টাকা দিলেও তিনি ফেরত দেন।’
স্বামীর কাজে গর্বিত সৌরভের স্ত্রী ফরিদা পারভীন। আর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছেলের টাকা পাওয়ার খবর শুনে আমি তাকে বলেছিলাম, যেকোনো উপায়ে টাকার আসল মালিকের কাছে পৌঁছে দিস। আল্লাহ আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন, অন্যের টাকার ওপর লোভ নেই।
শাহরিয়ার রহমান যিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি সৌরভের মাইকিং করে প্রকৃত টাকার মালিককে খুঁজে বের করার এই উপায়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সৌরভকে এইভাবে টাকার প্রকৃত মালিক যিনি তাকে খুঁজে বের করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে শুনেছি এখনো তিনি প্রকৃত মালিককে খুঁজে পাননি।’ তবে তিনি তার উদ্যোগে সফল হবেন এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।