মহিলা দলের সভাপতি হলেন ওবায়দুল কাদেরের ‘বান্ধবী’ চাঁদনী

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের নবগঠিত কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক নেত্রী আরজিনা পারভীন চাঁদনীকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

গত ২০ ডিসেম্বর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত একটি দলীয় প্যাডে প্রকাশিত কমিটির তালিকা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা ব্যাপক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

তালিকা অনুযায়ী, কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আরজিনা পারভীন চাঁদনী আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বিএনপির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এই নেত্রীকে সভাপতি পদে বসানো নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, অর্থের বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।

কমিটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাংগঠনিক পদে থাকা একজন সদস্যও আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নাসিমা আকতার নামের ওই সদস্য ৪ নং বরিশাল ইউনিয়নের তাঁতী লীগের সভানেত্রী ছিলেন।

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “যাদের এই কমিটিতে রাখা হয়েছে, তারা ৫ আগস্টের আগে দলের হয়ে কোনো ভূমিকাই পালন করেনি। এটি সম্পূর্ণ অর্থের বিনিময়ে গঠিত একটি কমিটি। অনতিবিলম্বে এটি বাতিল করে প্রকৃত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে স্বচ্ছ একটি কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।”

জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিল্লাত সরকার মিলন বলেন, “যিনি ১৬/১৭ বছরের সংগ্রামে দলের পাশে ছিলেন না, তিনি কিভাবে সভাপতির পদ পেলেন, তা বোধগম্য নয়। হাইব্রিড নেত্রীর দরকার নেই। দ্রুত এই কমিটি বাতিল করতে হবে।”

উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর সরকার মিনু মন্তব্য করেন, “যিনি আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন কিনেছেন, তিনি কীভাবে বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি হন? এই কমিটি যারা দিয়েছে, তারা কোনো যাচাই-বাছাই করেনি। আমরা জিয়ার সৈনিক, রাজপথই আমাদের ঠিকানা। আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের আমরা দলে নেব না।”

এ বিষয়ে আরজিনা পারভীন চাঁদনী বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার প্রশ্নই আসে না। বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও আমার ছবি রয়েছে। আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত।”

তবে জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী শোভা আকতার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমি আমার দলের জন্য কমিটি দিয়েছি। আপনারা কেন এত মাথা ঘামাচ্ছেন?”

জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, “কমিটি গঠনের বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এটি নিয়ে আমিও ক্ষুব্ধ।”

এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কমিটির পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে।


আবেগঘন চিরকুট লিখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ

চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় ক্যা*ন্সারে আ*ক্রান্ত এক মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার গলায় ফাঁ*স দিয়ে আ*ত্মহ*ত্যা করেছেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আগে নিজের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে তিনি সন্তানদের উদ্দেশে আবেগঘন চিরকুট লিখে রেখে গেছেন।

নিহত আবু সাইদ সরদার দুই ছেলে ইমন ও সায়মন এবং এক মেয়ে পায়েলের জনক। তিনি তার ছোট ছেলে ইমনের পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন। পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বায়েজিদ মিয়া জানান, খবর পেয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভাড়া বাসার একটি কক্ষের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লা*শ উদ্ধার করা হয়। কক্ষ থেকে ছয়টি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে, যা তার দুই ছেলে, এক মেয়ে, এবং নাতির উদ্দেশ্যে লেখা।

সু*ইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, ক্যা*ন্সারের চিকিৎসা ও দীর্ঘ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি আ*ত্মহ*ত্যার সিদ্ধান্ত নেন। সন্তান ও পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, “এ রোগের কোনো চিকিৎসা আছে বলে মনে হয় না। ক্যা*ন্সার, মুখের ঘা ও যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।”

মেয়ে পায়েলকে লেখা নোটে তিনি তার শারীরিক কষ্টের কথা উল্লেখ করেন এবং নিজের মৃত্যুর পর নগরীর চৌমুহনী কবরস্থানে মায়ের পাশে তাকে দাফন করার অনুরোধ করেন।

পুলিশের ধারণা, মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন এবং ভেবে-চিন্তে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসআই বায়েজিদ মিয়া জানান, তিনি ১৩ ডিসেম্বরও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সেটি সম্ভব হয়নি।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার তার ছোট ছেলের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে করাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

এই ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগ ও যন্ত্রণার প্রতি শোক এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আত্মহত্যার কারণ ও পারিবারিক পরিস্থিতি নিয়ে সমাজে আলোচনা শুরু হয়েছে।