সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে পানিবাহিত রোগ ও পোকামাকড়। জ্বর, সর্দি, আমাশয়, আমাশয়, পেটব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসিরা। এখনও জলাবদ্ধ জেলায় লাখ লাখ মানুষ। বানভাসিরা 450টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় এলাকায় ত্রান দিতে গিয়ে মরিয়ামের কথা শুনে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভাসালেন।
স্যার আমাকে দিন স্যার, আমি মরিয়রাম , আমাকে বাঁচান। আমার বাড়িতে কোন খাবার নেই, স্যার। আমাকে একটু যায়গা দিন। ফালাইদের ধাক্কা দিয়ে আমাকে বেতাইতে (পুরুষ)। তিনি ত্রাণ চাইতে এলে হাত তুলে চিৎকার করে কথা বলতে থাকেন।
রোববার (২৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু বন্যা কবলিত মানুষের তুলনায় অপর্যাপ্ত ত্রাণের আশায় অনেকেই পানির নিচে নেমে গেছে। ভিড় ঠেলতে পারেননি ছামিরুন। পেছন থেকে অন্যদের ঠেলে কোস্টগার্ডের নৌকার কাছে পৌঁছে ত্রাণ বিতরণকারীর নজর কাড়তে পারেননি তিনি। তাই হাত তুলে মিনতি করছিল।
অবশেষে সাংবাদিকের সহায়তায় ব্রণের প্যাকেট পান ছমিরুন। শুধু ছামিরুন নয়, ব্রণের প্যাকেটের পাশেই সাহায্যের জন্য হাহাকার করছেন শত শত নারী-পুরুষ। স্বস্তি পেয়ে ছমিরুন ঢাকা পেস্টের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর পর স্বামী রমজান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। শেফদের সহকারী হিসেবে কাজ করে এবং পেঁয়াজ মশলা বিতরণ করে কিছু টাকা পান তিনি। সেই টাকায় সংসার চলে।
তার সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বন্যার চারপাশে পানি থাকায় কোন কাজ নেই। বিয়ের অনুষ্ঠান নেই। তাই চাকরি না পেয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তিনি। একটি নৌকা উদ্ধারের জন্য আসবে শুনে তিনি নদীর তীরে চলে আসেন। গত দশ দিনে এই প্রথম তিনি খাদ্য সহায়তার প্যাকেট পেলেন। ডাবল খাবার পেতে শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে দিতে হয়েছে।
ছমিরুন বেগম বলেন, খাবারের প্যাকেটের জন্য বুক জলে নেমে গেলাম। কেউ আমাদের সাহায্য করছে না। চেয়ারম্যানের কোণায় মেম্বারকে দেখা যায়নি। আমরা অনেক কষ্টে দিন পার করছি। আমাদের সাহায্য করুন “আমাদের যথেষ্ট ল্যান আছে,” বলেছেন কোস্টগার্ড লেফটেন্যান্ট কাজী আকিব আরাফাত, ত্রাণ বিতরণ কর্মকর্তা। সবাইকে দেওয়া সম্ভব। নৌকায় করে অনেক স্বস্তি এনেছি। কিন্তু মানুষ এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। তাই সবাইকে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে।
এদিকে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার পানির স্তর কমছে। এছাড়া জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।