Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মরিয়মের দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করলে, ফের কল করতে নিষেধ করা হতো

মরিয়মের দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করলে, ফের কল করতে নিষেধ করা হতো

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে খুলনায় মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২) নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আলোচনায় আসে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। অবশেষে ফরিদপুর থেকে রহিমা বেগমকে সুস্থ এবং জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল শনিবার অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে লুৎফুল হায়দার যিনি খুলনার দৌলতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে রয়েছেন তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ফরিদপুরে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। এই ঘটনার পর নতুন করে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং অনেকে দাবি করছেন প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য এই ধরনের পরিকল্পনা করেছে পরিবারটি।

রহিমা বেগম যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন, সেখান থেকে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে খুলনা থানা পুলিশ। তারা হলেন- তারা হলেন- বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও কুদ্দুস মোল্যার ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)।

তারা এখন খুলনা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে। কুদ্দুস মোল্যা বর্তমানে বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুট মিলের কর্মচারী।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকায় নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করে। পরিবারের এক সদস্যের সহায়তায় সে বোয়ালমারীতে লুকিয়ে ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট খুলনা নগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা টিউবওয়েলের পাশে ঝোপের মধ্যে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পায়। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ না পেয়ে ওই রাতেই রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী খাতুন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। সর্বশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছিল।

এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মরিয়ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন, ‘আমি এইমাত্র আমার মায়ের লা’/শ পেয়েছি’। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর লা’/শ উদ্ধার করে তাকে নিজের মা বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নান। তবে পরদিন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে মরিয়ম ফে’সবু”কের মাধ্যমে জানান, তার মাকে পাওয়া গেছে বলে তাকে ফোনে জানান খুলনার পুলিশ সুপার। নিখোঁজের ২৯ দিন পর শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর থেকে মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১৭ আগস্ট থেকে ওই বাড়িতেই ছিলেন তিনি।

বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মল্যার ভাগিনা জয়নাল জানান, আমার চাচা খুলনা নগরীরমীরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলে চাকরির সুবাদে খুলনা শহরের মহেশ্বরপাশা এলাকায় নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ফেস”বুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপর সেই ছবি রহিমা বেগমকে দেখান এবং জিজ্ঞেস করেন এটা আপনার ছবি কিনা; এ সময় রহিমা বেগম হত”বাক হয়ে বলেন, মনে হচ্ছে আমার ছবি। তার মেয়ের ফে”সবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমা বেগমের বিষয়টি তাদেরকে বললে তারা ওই নম্বরের আর ফোন দিতে নিষেধ করে। এরপর থেকে আমার সন্দেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে শনিবার বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেনকে তার (রহিমা) কথা জানাই। তিনি খুলনা মহানগরীর ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিখোঁজ নারী রহিমা বেগম বলে নিশ্চিত করেন।

বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, খুলনা মহানগরীর দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পরিচিত। রহিমা বেগমকে না বলে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু জানালে তারা খুব দ্রুত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবে বলে জানান। কাউন্সিলর রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে বলেন। এরপর শনিবার রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কুদ্দুস মোল্যার বাড়ির তিন সদস্যকে খুলনা পুলিশ জবানবন্দি নিতে নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাটি সাজানো হতে পারে, তবে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তের পর সবকিছু খোলাসা হবে। মরিয়ম মান্নান তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেইসাথে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে তার পরিচিতদের কাছে তার মায়ের ছবি পাঠিয়ে পোস্টারিং করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মরিয়মের মাকে জীবিত উদ্ধার করা হলো।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *