খুলনায় মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে নিয়ে সৃষ্ট রহস্য যেন একের পর এক বেরিয়ে আসছে। মরিয়ম মান্নানের মা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে যে মামলা হয়েছিল সেটার তদন্ত সম্পন্ন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত মোতাবেক জানা গিয়েছে যে, মরিয়ম মান্নান এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং তিনি ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়েছিলেন। এমনকি তিনি তার মাকে নিখোঁজ হওয়ার দিনেও ‘আত্মগোপনে’ যেতে ১০০০ টাকাও পাঠিয়েছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মরিয়ম মান্নান রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন। মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীকে ফাঁ”সানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে তার ভাই এবং অন্য বোনদের সেই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম অনেকবার কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার ফিরে আসেন। পরিবারের সদস্যরা এসব ঘটনা জানতেন। কিন্তু ঘটনাটি পরিকল্পিত। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলার এজাহারে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান।
খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, সম্প্রতি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে এবং তা অনুমোদনের জন্য পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
তদন্তের বিষয়ে সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে মরিয়ম মান্নান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে কী পেয়েছেন তা তিনি একাই বলতে পারবেন। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন যে, রহিমা বেগম ২৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজ হন। রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী বাদী হয়ে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার।
ওই মামলায় তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরীফকে আসামি করা হয়। এ সময় তাদের আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে রহিমা বেগম তার মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
মামলাটি তদন্ত করছেন খুলনা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আব্দুল মান্নান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নান ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। মরিয়ম মান্নান প্রতিবেশীদের নামে একাধিকবার মামলা করলে প্রতিবারই প্রতিবেশীরা প্রতিবার নথিপত্র জমা দিয়েই বেরিয়ে গেছেন। তদন্তে জানা যায়, প্রতিবেশীদের ফাঁ”সানোর জন্য নাটকটি করা হয়েছিল।
মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, মরিয়ম মান্নান ও তার মা ও বাদীকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তারা কিছু বলছেন না। রহিমা বেগম একটাই কথা বলছেন- তাকে অপ”হরণ করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি চুপ থাকেন। কিছু বলছে না। এসব কারণে তদন্তে কিছু বিষয় অজানা থেকে যায়। তবে রহিমা বেগমের নিখোঁজ যে পরিকল্পিত ছিল তা বিভিন্ন প্রমাণসহ তদন্তে উঠে এসেছে। রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারও তাদের বিরুদ্ধে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মরিয়ম মান্নান পুরো ঘটনা সাজিয়ে তার মাকে শিখিয়েছিলেন কোথায় কী বলতে হবে। এদিকে যাদের বিরুদ্ধে মরিয়ম মান্নান অভিযোগ তুলেছেন তারাও আইনের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে অনেকে মরিয়ম মান্নানের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তিনি একজন নারী হয়ে যে পরিকল্পনা করেছিলেন সেটা দেখে অনেকে হতবাকও হয়েছেন।