Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মন্ত্রীর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল প্রতি মাসে ৩৭ টাকা, ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ

মন্ত্রীর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল প্রতি মাসে ৩৭ টাকা, ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ

কালীগঞ্জের লালমনিরহাটে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়ির বিদ্যুতের বিল এসেছে ৩৭ টাকা। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এপ্রিল থেকে জুলাই এই সময়ে প্রতি মাসে ৩৭ টাকা বিল তৈরি করেছে।

নভেম্বর ২০২০ -এ বিদ্যুৎ বিল ৩২ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো মাসে ৭২, ৫২ ও ৬৫ হিসেবে বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ২৪০৮ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। প্রায় চার বছরে মোট বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা। আর সেই বিল এখনো বকেয়া আছে।

জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামের প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে। নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নুরুজ্জামান আহমেদের নামে একটি সেচ সংযোগও রয়েছে। যার ডিজিটাল গ্রাহক সংখ্যা ২৮০০৪৮৯৪ , মিটার নম্বর ৫১৫৬২৫১৩ ।

এই মিটারে প্রায় চার বছরে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখা গেলেও তা বকেয়া রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মাসে গড়ে সাড়ে নয় হাজার টাকা বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শূন্য বিল। গত বছর এপ্রিল মাসে বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে বিল দেখানো হয়েছে ১৮০ টাকা।

মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে রকিবুজ্জামান আহমেদ তার নানার নামে প্রতিষ্ঠিত করিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুৎ বিল জানুয়ারিতে ৭২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১১১, মার্চে ১৫১, এপ্রিলে ১৮৯, মে মাসে ২২৯ এবং জুন মাসে ৫১২ টাকা।

শুধু জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ বিল হয়েছে ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। প্রায় চার বছরে বিল দেখায় ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, যা এখনও বকেয়া রয়েছে। মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর প্রায় চার বছর ধরে বকেয়া বিল রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ টাকা। তার নামের সঙ্গে একটি সেচ পাম্পও যুক্ত। গত চার বছরের জন্য বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা।

জানা গেছে, মন্ত্রী, তার ছেলে ও ছোট ভাইয়ের বাড়ির প্রতিটি কক্ষে এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ফ্রিজ, ফ্যানসহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করা হয়। তাদের সেচ পাম্পগুলি প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে জমিতে ধান এবং ভুট্টা জন্মানোর জন্য জল সরবরাহ করে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরনবী জানান, ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় নেসকো কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আবার মিটার বন্ধ থাকলেও ভূত বিল করেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তবে মন্ত্রীর বিল বকেয়া থাকলে সমস্যা নেই। যত দোষ সাধারণ মানুষের।

এ বিষয়ে মন্ত্রীর ছেলে ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, আমরা বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকি। কেয়ারটেকার আমাদের বাড়ির যত্ন নেয়। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে কি না তা কেবল তত্ত্বাবধায়কই জানেন। আমরা নিয়মিত সব বিল পরিশোধ করি।

বকেয়া বিল আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে নাকি মামলা হবে জানতে চাইলে রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, তাদের টাকার অভাব নেই। আগে কথা বলি। তিনি আরও বলেন, অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া বিল আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বিদ্যুতের বিল তৈরিতে কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে মন্ত্রীর ছেলে রকিবুজ্জামানের ফ্যামিলি ম্যানেজার মোহাম্মদ হোসেন খোকন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রীর নামে দুটি ও ছেলের নামে একটিসহ চারটি মিটার বিলই বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। কালীগঞ্জ বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ী আল আমিন যুগান্তরকে জানান, তার দোকান থেকে চার মিটারে মোট ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

About Rasel Khalifa

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *