কিছুদিন আগে পশ্চিমবাংলার প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা দায়ের হয় এবং সেইসাথে সংশ্লিষ্টতা পায় মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে পাহাড় সমান নগদ অর্থ উদ্ধার করে তদন্তকারীরা। এবার এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে ইডি, যার পাতায় পাতায় ভর্তি রয়েছে এই ধনকুবেরের প্রায় সকল সম্পদের হিসাব। চার্জশিটে উঠে এসেছে আরও বেশ কিছু ভিন্ন ধরনের চমকপ্রদ তথ্য।
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে যে প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ইডি জানিয়েছে, মা ডাক শোনার ইচ্ছে হয়েছিল অর্পিতার। যার অনুমতি দিয়েছিলেন স্বয়ং পার্থ।
ইডি সূত্রে খবর, সন্তান কীভাবে নিবেন সে বিষয়ও জানিয়েছিলেন পার্থ। অন্যের সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পার্থ চ্যাটার্জিকে তার ইচ্ছার কথা জানান। প্রাক্তন মন্ত্রীও একমত হয়েছিলেন। পারিবারিক বন্ধু হিসেবে নো অবজেকশন সহ সুপারিশ পত্রও লিখে দিয়েছিলেন পার্থ। অর্পিতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ছাড়াও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়। নথিতে অর্পিতার সন্তানের জন্য সুপারিশের একটি চিঠি রয়েছে, ইডি দাবি করেছে।
সূত্রের খবর, “এই চিঠিটি দেখিয়ে তদন্তকারীরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। অনেকেই আমার কাছে এই ধরনের সুপারিশপত্রের জন্য আসেন। তাই আমি সেই চিঠি লিখেছি। এটা আলাদা কিছু নয়।” ‘
২৩ জুলাই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। কয়েকদিন পর রথতলার ফ্ল্যাটে। দুই জায়গা থেকে উদ্ধার হয় মোট নগদ ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ৫ কোটি ৮ হাজার টাকার সোনা। এছাড়াও মেলে প্রচুর নথি, ব্যাঙ্কের পেপার, বীমার কাগজপত্র। জানা গেছে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) সম্পত্তির নামে একাধিক জীবন বীমা পলিসি রয়েছে। মোট ৩১ টি বীমা পলিসি রয়েছে। সমস্ত বীমার জন্য প্রিমিয়ামের মোট মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। উল্লেখ্য, তাদের বেশিরভাগেরই মনোনীত প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিমার প্রিমিয়াম দিতেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। দাবি ইডি’র।
চার্জশিট অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মোট ১০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া গেছে ৪০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মোট ৩৫ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে। যেখানে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ৪০ টি অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। যার মোট মূল্য ৪৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতার অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাট, ফার্ম হাউস, বাড়ি। এই বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স সবই পার্থ আর অর্পিতার নামে। এই সম্পত্তিগুলি একাধিক ভুয়ো সংস্থা এবং বেনামে পাওয়া যায়।
পার্থ মুখার্জী এবং অর্পিতা মুখার্জির বিষয়ে ইডি তদন্ত দল আরো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সম্পদের হিসাব নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতার মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অন্তরালে আরো কতটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ধারণা করছে অর্পিতা মুখার্জির সাথে পার্থর ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক ছিল যেটা বেশ কৌশলেই তারা চালিয়ে যেত।