পিরোজপুর-২ আসনের (ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নেছারাবাদ) ৩৮ বছরের সাম্রাজ্যের অবসান ঘটেছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুরের। এ আসনে নতুন এমপি হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ।
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট।
পিরোজপুর-২ আসনের ৬ বারের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মন্ত্রী টানা ১৪ বছর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার সময়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের কারণে প্রায় চার দশক ধরে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে তার সাবেক পিএস মহিউদ্দিন মহারাজ তাকে বেশ কয়েক বছর ধরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন। এবার সংসদ নির্বাচনে শিষ্যের কাছে হারতে হয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে।
নির্বাচনের শুরু থেকেই পরাজয়ের শঙ্কায় ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। নিশ্চিত লোকসান ঠেকাতে সাইকেল প্রতীক ছেড়ে দিয়ে নৌকায় উঠলেন তিনি। তবে ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও নেছারাবাদ উপজেলার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন মহারাজকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস নেতাকর্মীদের আবেগের তোয়াক্কা না করে জাপা চেয়ারম্যান মঞ্জুর পক্ষে তার জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজকে পরাজিত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। দল থেকে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাজ করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদেরও হুমকি দেন কানাই লাল বিশ্বাস। তবে ভোটের মাঠে মঞ্জুর রক্ষা পাননি। উল্টো মঞ্জুর দলের অনেক নেতা মহারাজকে জয়ী করতে সাহায্য করার জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের আগেও গোটা সংসদীয় আসনের প্রায় শতভাগ জনপ্রতিনিধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। পিরোজপুর-২ আসনে তিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই পৌর মেয়র মহারাজের নির্বাচনী প্রচারণায় দিনরাত কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে একটি বাদে বাকি ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও ঈগলের হয়ে কাজ করেছেন। তিন উপজেলা পরিষদের ছয়জন সাধারণ ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে চারজন ঈগলের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিয়ে সফলতা এনে দেন। এ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মহিউদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন জাপা নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ।
তিন উপজেলার মধ্যে ভান্ডারিয়ায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (নৌকা) পেয়েছেন 26061 ভোট। আর মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ৪০৬০৭ ভোট। এ উপজেলায় মহারাজ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬৪ ভোট বেশি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল এ উপজেলার তিন নম্বর তেলিখালী ইউনিয়নে। এখানকার ভোটাররা সর্বসম্মতিক্রমে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তেলিখালী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ফলাফল অনুযায়ী মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীকে ১৫০০৪ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী ও একাধিকবার সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন মাত্র ৪৯ ভোট।
কাউখালী উপজেলায়ও মহারাজ ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি ভোট। প্রাপ্ত ফলাফলে- ঈগল পেয়েছেন ১৩ হাজার ২৭০ ভোট এবং নৌকা পেয়েছেন ৯ হাজার ৮৭৪ ভোট।
জেলার নেছারাবাদ উপজেলায় মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীকে ৪৫ হাজার ৮৪৭ ভোট এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৯৮ ভোট। এখানে নৌকার চেয়ে ঈগল পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট বেশি।
মহিউদ্দিন মহারাজ 2016 সালে প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন। এ সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ শাহ আলম। তিনি জেলা পরিষদের প্রশাসকও ছিলেন।
মহিউদ্দিন মহারাজের পিতা মরহুম শাহাদাত হোসেন তেলিখালী ইউনিয়নের একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার সৎ ভাই মিরাজুল ইসলাম ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান। আরেক ভাই শামছুদ্দিন তেলিখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আরেক ভাই সালাউদ্দিন ব্যবসায়ী।