ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালী সেই দিন এখন আর নেই। ছবির শুটিং না হলেও মাঝেমধ্যেই এফডিসিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বর্তমানে এফডিসি প্রায় জনশূন্য বললেই চলে। শুটিং না থাকায় এফডিসির প্রধান গেট সরিয়ে কারওয়ান বাজার রেললাইন সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ এফডিসিতে যাওয়ার কথা কথাই ভাবেন না। ফলে এফডিসির ক্যান্টিনের ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্ট।
বিএফডিসি এক সময় লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে সোচ্চার ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই বিএফডিসিতে নিয়মিত কোনো সিনেমার শুটিং হয় না। এমনকি শিল্পীদেরও তেমন একটা আনাগোনা দেখা যায় না। সাম্প্রতিক কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এফডিসিতে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। এর কারণ ইউটিউবারদের এসব অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে তারা মুঠোফোন হাতে ধরে রেখে দেয় নিজেদের পদবি। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের লোকজন ইউটিউবারদের সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগও উঠেছে। আর এসব কারণে দীর্ঘদিন এফডিসি পাড়ায় ঢোকেনি দেওয়ান নজরুল, বজলুর রাশেদ চৌধুরী, এমএন ইস্পানিসহ অনেকে। শিল্পী সমিতির সক্রিয় সদস্য অঞ্জনা এবং বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বরাও এই ইউটিউবারদের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত। এফডিসিতে ইউটিউবারদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও কিছু ইউটিউবার শিল্পী ও কলাকুশলীদের তুচ্ছ করেছে। তবে তাদের এফডিসিতে প্রবেশের জন্য বেশিরভাগ প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পীরা দায়ী! কথিত প্রতিপক্ষকে হেয় করতে ইউটিউবাররা নিজেরাই ঢুকে পড়েন এফডিসিতে।
অনেক ইউ// টিউবার বেশি ভিউ এর আশায় মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে এফডিসি ও শিল্পীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে! তবে কিছু তথাকথিত শিল্পী তাদের ফে// সবুক ও ইউ// টিউবে দেশের স্বনামধন্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও ছড়াচ্ছেন। প্রযোজক সমিতির সঙ্গে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের দ্বন্দ্বে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এছাড়া শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ইউটিউবার এফডিসিতে ঢুকে শিল্পী ও কলাকুশলীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র অভিনেত্রী অঞ্জনা। সত্যি বলতে, আমি এই বিষয়ে খুব বিরক্ত, তিনি বলেছিলেন। গতকাল (মঙ্গলবার বিকেল ৪টায়) শিল্পী সমিতির বৈঠক হয়েছে। যেতে পারিনি তবে যুগ্ম মহাসচিব সাইমন সাদিককে ফোনে বলেছি, শিল্পী সমিতির তিন সদস্য (সাদিয়া মির্জা, মিজান ও জামাল পাটোয়ারী) ইন্ডাস্ট্রিকে অপমান করেছে। শিল্পী হিসেবে আমিও অপমানিত হয়েছি। রাস্তাঘাটে কথাবার্তা শুনতে হয়। এসব বিষয়ে সমিতির কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। এসব জঘন্য কাজকে আশ্রয় দিয়ে শিল্পী সমিতি কেন বিতর্কিত হবে?
অরুণা বিশ্বাস বলেন, জাতির পিতার তৈরি এফডিসিতে একদল অদম্য মেধাবীরা যেখানে লাখ লাখ দর্শক সৃষ্টি করেছে, সেখানে সেই লাখো দর্শকের অশ্রাব্য ভাষায় গুটিকয়েক মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের অপমান করে নিজেদের গর্বিত করছে। আর আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। আমি কানাডায় গিয়েছি এবং এটি সম্পর্কে আমার অনেক প্রশ্ন ছিল, তিনি বলেছিলেন। এই ইউটিউব স্পিকাররা দিন দিন ব্যস্ত থাকায় কিছুটা সম্মান পাওয়ার আশায় এফডিসি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন প্রকৃত শিল্পীরা। তারা সমিতির নামধারী কিছু অসাধু লোক। যার উদ্দেশ্য বাজে কথা বলে ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামাই। এফডিসি থেকে এসব দুষ্টদের বের করে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, এক সময়ে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশানে মুখোরিত ছিল এফডিসির প্রাঙ্গন। তবে এখন সবকিছুই নরবরে অবস্থার রুপ নিয়েছে। এমনকি খাবারের জন্য এফডিসির অনেক সুনাম ছিল একসময়ে। শুটিংয়ের সময় শিল্পীরা এখানেই খেত। এক সময় এফডিসির ক্যান্টিনে সিরিয়াল দিয়ে খাবারের অর্ডার দিয়ে বসতে হতো। সেই ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা যায় আরেক দুঃখের ছবি। এখন বসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। ক্যান্টিনের সব চেয়ার-টেবিল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা নেই। লোকসানের স্বীকার হয়ে দুই বছর ধরে ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন নৃত্য পরিচালক এ কে আজাদ।