রাজধানীসহ সারা দেশে সাম্প্রতিক অপরাধের ঊর্ধ্বগতি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সংগঠনটির মূল নেতৃত্বের পরিকল্পনায় পেশাদার অপরাধীদের মাঠে নামানো হচ্ছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা সরাসরি যুক্ত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। তালিকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পরিচয়, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম, এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্দেশ্য শুধুই নজরদারি বাড়ানো, কোনো হয়রানি নয়।
গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ছাত্রলীগ কার্যত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপরই অন্তর্বর্তী সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে। এক মাস ধরে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ বেড়ে গেছে, এবং বেশিরভাগ ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টাই চালাচ্ছে না, তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ কালো টাকার মজুদ রয়েছে। এসবের মাধ্যমে তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং জেলায় জেলায় তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পুনর্গঠন বা অন্য কোনো বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ১৫ বছরের ক্ষমতায় থাকার সময় সংগঠনটি যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তাতে তাদের পুনরায় সংগঠিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে তারা কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত অপরাধীদের ব্যবহার করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি ঢাকায় অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগ করা কোনো অপরাধ নয়, তবে যারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপরাধ করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। অন্যথায়, তারা নতুন কোনো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবার সংগঠিত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা এই ধরনের ব্যক্তিদের আশ্রয় দিচ্ছে না।