বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বয়কটের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সরকারকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে ব্যর্থ হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের একদিন পর নতুন ছক এঁটে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ভোট শেষ হলেও তারা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তৃণমূল চায় কর্মসূচীতে জড়িত লোকজন যাতে মাঠে নামতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিক থেকে বার্তার অপেক্ষায় থাকবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান বিএনপি নেতারা। এ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ এভাবেই চলবে। এর থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। আওয়ামী লীগের এই ডামি নির্বাচন দেশের মানুষসহ সারা বিশ্ব দেখেছে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে প্রস্তুত। দলীয় হাইকমান্ড যে কর্মসূচী নেবে আমি সেই কর্মসূচি পালন করব।- মীর সরফত আলী সপু
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ঠেকাতে না পারলেও নতুন সংসদ বেশিদিন টিকবে না বলে দলীয় হাইকমান্ড সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাড়ি-ঘর ছাড়া মামলা-হাম”লায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার থেকে মাঠের আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এরই মধ্যে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশের ভোট পরিস্থিতি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে উপস্থাপনের পাশাপাশি দলটি জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও সরবরাহ করবে।’
ভোটের পর কী কর্মসূচি হবে তার জন্য একদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে রয়েছে। এই অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।- আব্দুল মঈন খান
দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন আরও জোরালো করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি যেসব কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে সেখানেই তারা ধরাশয়ী হচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমন কর্মসূচি চাইছেন যেন নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেন। সেক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের পক্ষে মত তাদের। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের যদি কোনো পদক্ষেপ থাকে সেক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগসহ যে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে।
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ এভাবেই চলবে। এর থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। আওয়ামী লীগের এই ডামি নির্বাচন দেশের মানুষসহ সারা বিশ্ব দেখেছে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে প্রস্তুত। দলীয় হাইকমান্ড যে কর্মসূচি নেবে আমি তা পালন করব।
বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন না, বিশ্বের যতগুলো গণতন্ত্রকামী দেশ আছে যারা ডেমোক্রেটিক প্রসেসটা ধরে রেখেছে তারা সবাই বলছেন বাংলাদেশে গত ১০ বছরে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যা করা ডেমোক্রেসি ফেরত আসুক। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রকামী সব দেশে চাচ্ছে।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। তারা শুধু বিদেশী দেশ নয়, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তারা গণতন্ত্রকে ধরে রাখে এবং লালন করে। তাই তাদের ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণের কাছে লালিত আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ব্যতীত সকলেই গ্রহণ করেছেন।
ভোটের পর কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ভোটের পর কর্মসূচির জন্য একদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে রয়েছে। এই অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করবে।