‘মন্ডতোষ ইউনিয়নে ভোট হবে উৎফুল্ল মনে, একমাত্র নৌকার। একমাত্র মকবুল সাহেবের নৌকার। এর বাইরে কোনো লোক কোনো এজেন্টও থাকবে না, কিচ্ছু থাকবে না। আমরা মমিনপাড়া সেন্টার (ভোটকেন্দ্র) দখল করে রাখবো। আমরা ওপেন ভোট দেবো। সেই জায়গায় আপনারা শুধু সহযোগিতা করবেন আমাদের।’
এমন হুমকি দিয়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মন্দতোষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম মিন্টু। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার মল্লিকচক গ্রামে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন হুমকিমূলক বক্তব্য দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনবারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার।
এবারের নির্বাচনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টারের পক্ষে কাজ করছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলার মন্দতোষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফসার আলী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম মিন্টু। তিনি নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন।
গত রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলার মল্লিকচক গ্রামে নূর ইসলাম মিন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম মিন্টুর আইডি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ ছিল। সেই ভিডিও এসেছে এই প্রতিনিধির হাতে।
ভিডিওতে দেখা যায় মন্ডতোষ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম মিন্টু তার বক্তব্যে বলছেন, ‘মল্লিকচক গ্রাম বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল। কয়েকটা শয়তানের কারণে বিধ্বস্ত ছিল। এটা কে সমাধান করছে, ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসানায়েন রাসেল (এমপি’র ছেলে) এবং এমপি সাহেবের (মকবুল হোসেন) নির্দেশনায় আজকে মল্লিকচকে শান্তি ফিরে আইছে। সেই জায়গা থেকে আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের নৌকাকে বিজয়ী করতে মল্লিকচকের যত লোক আছি আমরা মমিনপাড়া সেন্টারটা (ভোটকেন্দ্র) দখল করে রাখবো। মমিনপাড়া সেন্টারে আমরা ওপেন ভোট দেবো। যাতে ভাঙ্গুড়ার মানুষ বলতে পারে আমরা ওপেন ভোট করিছি।’
বক্তব্যে নুর ইসলাম মিন্টু আরো বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ যত সন্ত্রাসী থাক, শত্রæ থাক, এই এলাকার চেয়ারম্যান আফসার আলী যে নাটক করছেন, তার কোনো দাম নাই। আফসারের সাঙ্গপাঙ্গ যা আছে, ওদের হাড়-হুড্ডি ভাইঙ্গে এই এলাকা থেকে আমরা শেষ কইরে দেবো। মন্ডতোষ ইউনিয়নকে একদম নীট অ্যান্ড ক্লিন করে রাখবো। মন্ডতোষ ইউনিয়নে ভোট হবে উৎফুল্ল মনে, একমাত্র নৌকার। একমাত্র মকবুল সাহেবের নৌকার। এর বাইরে কোনো লোক কোনো এজেন্টও থাকবে না, কিচ্ছু থাকবে না। সেই জায়গায় আপনারা শুধু সহযোগিতা করবেন আমাদের।’
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘প্রচারণা শুরুর অনেক আগে থেকেই নৌকার নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে আমাকে এবং আমার সমর্থক লোকজনকে হুমকি ধামকী দিচ্ছে। বিভিন্ন সভায় তারা নৌকা ছাড়া কাউকে ভোট করতে দেয়া হবে না, নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে আসার দরকার নাই, নৌকার বাইরে কেউ ভোট দিলে হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে-এমন হুমকি ও উষ্কানীমুলক বক্তব্য দিচ্ছে তারা। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না। ভোটকে উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে চ্যালেঞ্জ সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি।’
এ বিষয়ে মন্ডতোষ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের একটা মিটিং ছিল। গ্রামের মানুষ তো ভাই, তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে বক্তব্য দিতে গিয়ে দু’একটা কথা ¯িøপিং হয়ে গেছে। এটা আসলে আমার বলা ঠিক হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আমাদের উৎসবমুখর ভোট করতে হবে। এরতো কোনো বিকল্প নেই। বহির্বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে হবে গ্রহণযোগ্য ভোট হয়েছে। আসলে ভাই কথা বলতে বলতে দু’চারটা কথা বেশি হয়ে গেছে এই আর কি।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।