ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহন শেষ হওয়ার পরে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় যে জয়ী এবং বিজয়ী দুই পক্ষ্যে ভিতরে সংকটের সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্ট সংকটের কারন কি সেটা জানিয়ে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এবিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, নির্বাচন প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিযোগিতা যদি হাড্ডাহাড্ডি হয় তাহলে সেখানে সংকট সৃষ্টি হওয়াটা সম্ভাবনা থাকে।
নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি হলেই ভোট শেষে মারামারি হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, যখন মারামারি হয়, তখন ভোটের শেষে মারামারি হয়। গতকালও তাই হয়েছে। একটি শিশু প্রয়াত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সংলাপের দশম দিনে গণফোরামের সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার সারাদেশে উপজেলা পৌর পরিষদসহ ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের পর নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানালেও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ইউনিয়নের ভোটের ফল ঘোষণার পর পুলিশের গু// লিতে এক শিশু প্রয়াত হয়েছে। দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ গু// লি চালালে ছেলেটির বাবা-মা, চাচা ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। ঘটনাস্থলেই তার প্রয়ান হয়। তাই আজ এ বিষয়ে মুখ খুললেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ১৫ জুন বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনের আয়োজন করে। তবে এবারই প্রথম তাদের আয়োজিত নির্বাচনে সহিংসতায় একজনের প্রয়ান হয়েছে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাত ১০টায় ডিসি-এসপিকে ফোন করেছিলাম। মি কি হলো নির্বাচন শেষ। তা শেষ হওয়ার পর প্রার্থীরা এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালায়। তার এক সহকর্মীর কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের একজন সহকর্মী প্রায়ই বলেন, আমাদের মানসিক সমস্যা আছে। আমি একটি পছন্দ করতে হবে। কিন্তু আমাকে জিততেই হবে। এর মানে হল যে আপনি হারতে পারেন তা কেউ মেনে নেয় না। আমাদের এই মানসিক দুর্বলতা আছে। তাই এই সহনশীলতাকে জাগ্রত করতে না পারলে একটা সঙ্কট থেকেই যাবে। হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বড়, আপনারা দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা কখনই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, আমাদের কাছে কেবল একটি ব্যালট বাক্স আছে যেখানে একজন ভোটার গিয়ে কাগজ রাখেন, দায়িত্ব সীমিত। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বজায় রাখা এবং উন্নত করা তার দায়িত্ব।
সিইসি নিজেকে নগণ্য দাবি করে বলেছেন, আমি তাদের (রাজনীতিবিদদের) অনেক বড় দেখতে চাই। এটা অনেক বড় মনে হচ্ছে এর পরে, আপনার দায়িত্ব অনেক বড় হয়ে যায়, ভদ্রলোক সংসদ সদস্যরা। আপনার কাছে যেমন প্রত্যাশা আছে, তেমনি আমাদের কাছে ছোট প্রত্যাশা আছে, কিন্তু আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমি বিনা দ্বিধায় বলতে পারি। বক্তৃতা শেষে তিনি পাবলিক ফোরামকে বলেন, মন খারাপ করবেন না এবং ক্ষুব্ধ হবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি ঠিক করতে নির্বাচনের দেড় বছর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এ জন্য ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল ইসির সংলাপ বয়কট করেছে। ১০ম দিনে ৩৬টি দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি না বলে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা হবে ২৬টি। ৯টি রাজনৈতিক দল সংলাপ বয়কট করেছে। এছাড়াও, ২টি পক্ষ সময় বাড়ানোর অনুরোধ করছে৷ এরপর আরও ২টি দলের সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির, যা চলবে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত ইসির পক্ষ থেকে এই প্রথম ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের আয়োজিত প্রথম ভোটেই ব্যাপক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পরপরই এই সংকট দেখা দেয়। নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরেই সৃষ্ট সংকটের কারনে নির্বাচনী মাঠেই এক শিশু প্রাণ হারায়।