প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশিদের উপস্থিতি নিয়ে দুঃখজনক মন্তব্য করে বলেছেন, ভোটে বাহিরের থাবা পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ও পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন, বিধি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক বৈশিষ্ট্য হলো আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাহির থেকে থাবা বা হাত এসে পড়েছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যেভাবে ইউনাইটেড স্টেটস কমান্ড করতে পারে। আমি কিন্তু সেইভাবে ইউনাইটেড স্টেটস এর ওয়াশিংটনে গিয়ে হুমকি-ধামকি করতে পারছি না। এটা একটা বাস্তবতা।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাকে বাচঁতে হলে, আমার জনগণকে বাঁচতে হলে, আমার গার্মেন্টসকে বাঁচাতে হলে, আমার সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে হলে.. যেই দাবিটা আমার, জনগণের পাশাপাশি বাহিরের (বিদেশীদের)। ওরা খুব বেশি দাবি করে নাই। একটাই দাবি বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এখানে কোনো কারচুপির আশ্রয় নেয়া যাবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সম্প্রতি আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরেও সিল মারা হচ্ছে। আমরা তা প্রতিহত করতে পারিনি।
আমাদের প্রশাসন পারেনি। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেননি। এটা একটা লজ্জাজনক ব্যপার।
সিলমারাটা নির্বাচনী সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে দাবি করে সিইসি বলেন, এটা মন্দ সংস্কৃতি। পেশিশক্তির ব্যবহার করা। কালো টাকা ব্যবহার করা। এই ধরনের কারচুপি করা দীর্ঘদিন ধরে চর্চার মাধ্যমে একটা অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সকল ক্ষেত্রে আমারা নিরন্তর চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি-নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য। নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
সিইসি বলেন, আমেরিকার গণতন্ত্র আড়াই শ’ বছরের বেশি হয়ে গেছে। আমাদের গণতন্ত্র খুবই নতুন। কিন্তু কখনো কখনো অনেক ধাক্কা, সামরিক শাসন, গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদির কারণে ৫০ বছর ধরে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া স্থিতিশীল হতে পারেনি।
নির্বাচনের দিনটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই যারা ভোটার তারা আসছে, আসতে পারছে। তাদেরকে বাধা দিচ্ছে না। যদি বাধা দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছে। আমাদের মেয়েরা ছেলেরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০টি ‘নির্বাচন তদন্ত কমিটি’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাচন তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হবে। এসব কমিটির কার্যকারিতা চলাকালে নির্বাচন-পূর্ব কোনো অনিয়ম হলে তারা তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাবেন।