৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পরাজয়ের পর জাতীয় পার্টিতে টালমাটাল অবস্থা। লাঙ্গলের পরাজিত প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় পার্টি সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা প্রার্থীদের টাকা না দিয়ে ভাগাভাগি করেছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জিএম কাদের। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, ২৬টি আসন ছাড়া সরকারি দল ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, তার প্রমান আছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ১১ আসন পাওয়া দলের সফলতা। তিনি বলেন, যেখানে বিএনপিসহ অন্য কোনো দল টিকতেই পারছে না, সেখানে ১১ আসন পাওয়া কম কথা নয়।
তিনি বলেন, কোনো জোটে যাইনি। আসন ভাগাভাগি নেই। ক্ষমতাসীন দল বলল, আপনারা নির্বাচনে আসেন, তখন আমাদের (জাপা) প্রতিনিধি সেখানে যান। প্রতিনিধিরা আমাদের ব্রিফ করেছেন। দলের অন্যদের জানিয়েছি কী কথা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমি তখন তাদের (সরকারি দল) বলেছিলাম, আপনারা যেভাবে চাইছেন, সেভাবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমাদের দরকার ছিল দলীয়করণ যেন না হয়। সরকারি দল বিপুল অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে, যা রোধ করার শক্তি আমাদের নেই। তারা জোর করে ভোট দখল করে ফেলবে। এটা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি।
‘তখন তারা (আওয়ামী লীগ) একটি ফর্মুলা দিল। তারা অনেক জায়গা থেকে তাদের প্রার্থী উঠিয়ে নেবে। নৌকার প্রার্থী থাকবে না। একই সঙ্গে বলল, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। তারা কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী নয়। তাদের আওয়ামী লীগের পদপদবি সবই থাকবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও তাদের সঙ্গে থাকবে, শুধু নৌকা প্রতীক থাকবে না। এভাবে প্রস্তাব দিয়ে বলেছিল, ‘বাকিটা আমরা দেখব। যেসব আসন আপনারা (জাপা) চাইছেন, এর বাইরেও যদি লাঙ্গলের প্রার্থী থাকে, তাদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নেব। সেখানে যেন পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন না হয়। এটা ছিল সমঝোতা। এর ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টি আসনের কথা বলেছিলাম। তাদের বলেছিলাম, ‘এগুলো থেকে নৌকার প্রার্থী সরিয়ে নেন, তাহলে আমরা লড়াই করে জিতে আসব। এরপর আওয়ামী লীগ যে ২৬ আসন ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিল, তা ৫০-৬০টির যে কয়টি ভালো মনে করেছে তা দিয়েছে। তাদের যেগুলো পছন্দ হয়েছে, সেগুলোই দিয়েছে,’ যোগ করেন জি এম কাদের।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরও কিছু বেশি আসন চেয়েছিলাম। তখন বলা হলো, তালিকা দিন। আমি ১০-১৫টি আসনের তালিকা দিয়েছিলাম। যারা যারা এখন অভিযোগ করছেন, তাদের আসনও ছিল তালিকায়। তারা তা জানতেন। সরকারি দল থেকে তখন আমাকে বলা হলো, এগুলো বিবেচনা করা হবে। প্রথম তারা জানাল, আমার স্ত্রীর জন্য ঢাকা-১৮ আসন দিয়ে দিয়েছে। তখন আমি বারবার বলেছি, বাকিগুলোর কী হবে। তখন তারা বলেছে, ‘যেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে কথা হচ্ছে। এটা হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না। যারা এগুলো বলেছিল, তারা আমার সামনেই বসা ছিল। কিন্তু তারপর যখন বিকেলে (১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে) তালিকা বের হলো, তখন দেখা গেল আমার স্ত্রীর আসন আছে, কিন্তু লালমনিরহাট-৩ আসন নেই। আমি এই আসনের বর্তমান এমপি। সেই আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু লালমনিরহাট-৩ বাদ দিয়ে আমার স্ত্রীর আসন ঢুকিয়ে দেওয়া হলো তালিকায়। ততক্ষণে সময়ও শেষ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে আসনগুলো দেওয়া হয়েছে তা অনেক জাতীয় দলই চায়নি। তারা তাদের নিজের ইচ্ছামত এগুলো দিয়েছে। তাই আমাদের প্রতি কোন উপকার করা হয়নি। আমার সামনেই জাপার ছাড় না পাওয়া প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, আপনাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হবে। আপনাদের কোনো ডিস্টার্ব করা হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন লালমনিরহাট-৩ আসনের সবকটি ভোটকেন্দ্র দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে দখল করা হয়। এর তিন-চার দিন আগে জাপা প্রার্থী আহত হন। আমি সব অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু ডিসি-এসপিরা সহযোগিতা করেননি। নির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টির এজেন্টদের জোর করে বের করে দিয়ে সিল মেরে দেওয়া হয়। এজেন্টরা গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। জাতীয় পার্টির এজেন্টদের বেঁধে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে সব প্রমাণ আছে।
জিএম কাদের আরও বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে এসে যা শুনেছি, ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। একজন আমাকে বললেন, ভোট দিতে গিয়েছিলাম। গিয়ে শুনি ভোট হয়ে গেছে। আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম, কেউ এসে ভোট দিয়ে গেছে। দুপুর ২টার পর তারা সব কেন্দ্র দখল করে সিলগালা করে দেয়। খবর সমকালের।