জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপিকে অন্য কোথাও কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় সরকার। বিএনপির চলমান কর্মসূচি এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা কঠোর হচ্ছেন।
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই সব মেট্রোপলিটন কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ঝামেলাকারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সহিংসতায় জড়িত বিএনপি সমর্থকদের আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির দিন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে না এসে বিএনপি ভোট ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। ফলে তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ছাড়াও রাজপথ দখলের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে বারবার তা প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিকে ঘিরে তাদের নৈরাজ্য এবং তার পরের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তাই তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির এসব কর্মসূচি নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন- ২৮ অক্টোবরের পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে গেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ফলে এর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে- তাহলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিনা কারণে বিএনপির সঙ্গে বিশৃঙ্খলায় না জড়াতে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখবে।
ক্ষমতাসীনরা বলছেন, তারা মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ হারাতে চান না। বরং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ফলে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা ও পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে মারধরসহ বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিকে ঘিরে পরিস্থিতিকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এছাড়া বিএনপির চলমান কর্মসূচিকে ঘিরে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা সামনে আনছেন তারা। এর পাশাপাশি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিরে আগুন ও সন্ত্রাসের বিষয়গুলো সামনে এনে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশ সম্প্রতি ৪০ সদস্যের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুঁজে পেয়েছে। ওই গ্রুপের বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা অগ্নিসংযোগকারীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। পুলিশ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ জনকে শনাক্ত করেছে যারা হয় অগ্নিসংযোগের জন্য অর্থ দিয়েছিল বা এতে জড়িত ছিল।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো প্রচারণা নেই। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে যারা নাশকতা করছে তাদের আমরা কোনো ছাড় দিচ্ছি না। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। আগামী দিনে যারা মানব জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যেখানে ভাংচুর, সেখানেই গ্রেফতার- এই নীতিতেই পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করেছি।