বাংলাদেশের একটি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া সত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সাথে যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে সেখানেও যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে কাছে পেতে চাইছে। এদিক থেকে চীন বাংলাদেশের এক অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পাশে থাকার আশাবাদ জানিয়েছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার নির্বাচনে বাংলাদেশের নিকট অনুরোধ জানালো যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। ওই নির্বাচনে আমেরিকান প্রার্থী ডরিন বগডান-মার্টিনের পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন পেতে গত শনিবার থেকে ঢাকায় তিন দিনের সফর শুরু করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিশেল জে সিসন।
সোমবার বিকেলে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিশেল জে সিসন আইটিইউ নির্বাচনে বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ভোট দিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখনো সময় আছে।
বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশ খতিয়ে দেখছে কে সেরা প্রার্থী।
উল্লেখ্য, আইটিইউ মহাসচিব নির্বাচন ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ‘টেনিপোটেনশিয়ারি সম্মেলনে’ অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন প্রার্থী ডরিন বগডান-মার্টিন নির্বাচিত হলে, তিনিই হবেন ITU এর ১৫৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম মহিলা মহাসচিব। ওই নির্বাচনে রাশিয়া তার টেলিযোগাযোগ ও গণযোগাযোগ বিভাগের উপমন্ত্রী রশিদ ইসমাইলভকে মহাসচিব পদে মনোনীত করে।
এদিকে মিশেল জে সিসনের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয় তুলে ধরে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের বিভিন্ন বৈঠকের আলোকে এ আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, জলবায়ু সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও চেয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা (মার্কিন প্রতিনিধি) বলেছেন যে এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। মার্কিন অর্থ বিভাগ এবং ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল অফিস এ বিষয়ে কাজ করে। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা বলেছি, আমরা তাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করতে চাই। এ জন্য তাদের আইনি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, তিনি মিশেল জে. সিসনের সাথে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সহযোগিতা, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগ, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষির মতো বহুপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তাইওয়ান ও চীনের সরাসরি নাম না নিয়েই সুশৃঙ্খল বিশ্বব্যবস্থা মেনে চলার জন্য সমর্থন চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরে জাতিসংঘের নীতি ও সিদ্ধান্ত মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগ নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চায়। তারাও আমাদের সেখানে চায়। ‘
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব এবং মার্কিন সহকারী সচিব বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, মানবাধিকার, মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মিশেল জে সিসন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমার থেকে আগতদের বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই। তাদের অবিলম্বে ও নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিশেল জে সিসন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের টিকাদান কর্মসূচি, খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা মিশন, বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন। তারা বহুপাক্ষিক ফোরামেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।
মিশেল জে. সিসন তার সম্মানে সেক্রেটারি অফ স্টেট কর্তৃক আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। তিনি তার প্রতিনিধিদলসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। বৈঠকে শান্তিরক্ষা মিশন, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, মিয়ানমার শরনার্থী সংকট ও তাদের প্রত্যাবর্তন, জি-৭৭, জাতিসংঘ পালাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা কামনা করেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে নেওয়ার বিষয়ে। এদিক থেকে মার্কিন সহকারী সচিব পাশে থাকার জন্য আশার কথা জানান।