ফের অভিনয়ের জগতে আরো একটি জনপ্রিয় তারকার পতন। প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জি ( Chatterjee )। টলিউড অভিষেক চ্যাটার্জি ( Chatterjee )র অকাল প্রয়াণে শোকাহত সমগ্র শোবিজ জগৎ , যিনি মাত্র ৫৭ বছর বয়সেই পারি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। আনুমানিক সকাল ৭ টায় এই দুঃসংবাদটি পাওয়ার পর, কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে অভিষেক চ্যাটার্জি ( Chatterjee ) আর নেই। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও ( Rituparna Sengupta ) প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। এ খবরের সত্যতা তিনি মানতে চাননি। ঋতুপর্ণার কথায়, “সকালে ( সকালে ” morning ) যখন খবরটা শুনি, প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।”
টলিউড অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জি ( Chatterjee )র সঙ্গে সুজন সখী দহন এর মতো জনপ্রিয় ছবিতে কাজ করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাদের জুটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। পরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু ৫৭ বছর বয়সে অভিষেকের না ফেরার দেশে যাওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সুত্র- আনন্দবাজারের খবর।
হুবহু তুলে ধরা হলো তার লেখা। একটা ঘরে মিঠু আমার হাত দুটো একসাথে চেপে আমার গলার কাছে মুখ নামিয়ে আদর করার চেষ্টা করল। আমি প্রতিবাদ করছি। আমি চিৎকার করছি। কাঁপছি। বাইরে মণ্ডপ থেকে গান আসছে। মিঠুর সেই বিখ্যাত সংলাপ। “আমি তোমার পুরোনো প্রেমিক নই…” সংলাপ ছিল। আমি জানি না আমি পুরো জিনিসটি সঠিকভাবে লিখেছি কিনা। ঋতুদা থাকলে বলতে পারতো। এই দৃশ্য খুবই পরিচিত। আজও দেখছি নেট মধ্যে দিয়ে আসছে। ঋতুপর্ণা ঘোষের দহন ছবি। আমি মিস্টি।
সেই থেকে আমাদের সম্পর্ক। মাধুর্য এভাবে চলে যাবে কি করে? আমি আজকাল টেলিভিশন দেখতাম এবং বুঝতে পারি যে তিনি তার শরীরের যত্ন নিচ্ছেন না। ঘুম, খাওয়া দাওয়া ঠিক সময়ে কিছুই করেনা। বরাবর খুব জেদি। সে যা ভালো বুঝবে তাই করবে। হয়তো তার মনে অনেক রাগ তৈরি হয়েছিল। বেশি না পাওয়ার বিরক্তি। হয়তো তার বিষণ্নতা নিজেকে অদৃশ্যভাবে আঘাত করেছে। আমি জানি না… সে আজ অনেক দূরে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
প্রসেনজিতের পর তার সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমাদের জুটি সুপারডুপার হিট! তারপর আমরা যেখানেই যেতাম লোকজন আমাদের সঙ্গে কথা বলত। একসাথে দেখতে চেয়েছিলেন। আমাদের শেষ ছবি নীলাচলে কিরীটী। তার চলে যাওয়া বাংলা চলচ্চিত্রে শূন্যতা সৃষ্টি করবে। বাংলা চলচ্চিত্রের খরার সময় মিঠুর মতো অভিনেতারা এসে এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন। স্বপন সাহার ( Swapan Sahar ) সুজন সখী তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এই শিল্প দীর্ঘ দাঁড়িয়েছে। আমার দ্বিতীয় সুপারহিট ছবি সুজন সখী। আমরা দুজনেই সেই ইমেজ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের একটা নাম তৈরি করেছি। এই ছবি দিয়ে গ্রামে আমাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। সেই সিনেমার গান আমার এখনো খোলা মাঠে গাইতে ইচ্ছে হয়। অনেকেই বলেছেন, আমাদের জুটি জনপ্রিয় ছিল কেন? আসলে মিঠু তখন খুব সুদর্শন ছিল! সেই চেহারাটা আমার এখনো মনে আছে। সে সব মেয়েদের কাছে ক্রমশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দায় আমাদের রসায়ন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ভালো নাচতেন। কিন্তু তার শেষ দিনে আমাদের সম্পর্ক টেকেনি। অনেক দিন আর যোগাযোগ নেই।
আমার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি দহন ও মিঠুকে ( Mithuke ) নিয়ে নির্মিত হয়েছে। মিঠুই আমার নাম ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রশংসা করেছেন। এটা আগে কোথাও বলিনি। চলে যাওয়ার পরই বা বললাম কেন? আমি জানি না কেন আমাদের ভিতরে এমন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমাদের এত ভালো বন্ধুত্ব, কিন্তু হঠাৎ একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেল। তবে আমি সবসময় তার সম্পর্কে ভালো কথা বলেছি। কিন্তু…
কি হলো! সে আমাকে বুঝতে পারেনি। তিনি আমার সম্পর্কে খোলাখুলি বলেছেন, যা সত্য নয়। আমি কখনোই তাকে কষ্ট দিতে চাইনি। সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। সে কি না বুঝে চলে গেল? আমার মনে আছে আমরাও প্রসেনজিতের পরিচালনায় কাজ করেছি। আমরা নায়ক-নায়িকা। সেই সিনেমাও হিট। আমরা আবেগগতভাবে গ্যাস ফুরিয়ে অনুভব করছি। প্রয়ান যে তার জীবনে এভাবে আসবে তা বুঝিনি। এই বয়সে চলে গেলেন কেন? নিজের দিকে তাকানওনি? মিঠু সবসময় মন খারাপ করতো, কিন্তু সেরকম নয়। উল্টো, তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রফুল্ল। সেটে সবার সাথে অনেক মজা করতাম। তার আচরণ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই তাকে ভালবাসত। খুব প্রাণবন্ত ছিল। পরিচালকের কাছে নিজেকে সঁপে দিতেন মিঠু। আমার মন খচখচ করছে। মিঠুর সাথে আর কখনো কথা হবে না! আমাদের ভুল বোঝাবুঝির কি বাকি রইলো মিঠু? সে কি সত্যিই বুঝতে পারেনি?
উল্লেখ্য, ঋতুপর্ণার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি শেষ হওয়ার আগেই বিদায় জানালেন অভিষেক। এই অভিমান মনে বাসা বেধে রয়েছে ঋতুপর্ণার। উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, মিঠু সারাক্ষণ যে দুঃখ লালন করতেন, তা কিন্তু নয়। উল্টো, তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রফুল্ল। সেটে সবার সাথে অনেক মজা করতেন। তার আচরণ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই তাকে ভালবাসতেন। খুব প্রাণবন্ত ছিল। পরিচালকের কাছে নিজেকে সঁপে দিতেন মিঠু। মনটা ছটফট করছে। মিঠুর সাথে আর কথা বলবো না। আমাদের ভুল বোঝাবুঝির কি হয়েছে মিঠু?