বাংলাদেশের ( Bangladesh ) বিচার বিভাগ সব সময় বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার দেওয়ার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকেন। অনেক সময় তথ্য প্রমাণের অভাবে এবং অসত্য উপস্থাপনের কারনে অনেক সত্য তথ্য ও প্রমাণ ঢাকা পড়ে যায়। যার কারণে বিচারক অনেক সময় এই সকল ভুলের কারনে ভুল রায় দিয়ে থাকেন। এবার এই ভুল রায়ের বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, একজন ব্যক্তি যদি কোনো রকম ভুল বিচারের শিকার হন, তবে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন।
গতকাল রোববার ( Sunday ) (২৯ মে ( May )) গাজীপুরে ( Gazipur ) শি/’শু হ/”ত্যা মামলায় দুই আসামির খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায়ের মাধ্যমে ( May ) পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ( Krishna Debnath ) ও বিচারপতি কে এম জাহিদ ( KM Zahid ) সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালত শংকর দেবনাথ ও জাকির হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছেন। আজ রোববার খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে বলা হয়েছে যে, হাইকোর্ট মনে করেছে যে, মামলাটি ভুল বিচার করা হয়েছে (মিসক্যারেজ অব জাস্টিস)। এই বিচারের কারণে, ভুক্তভোগী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। মামলায় শংকর চন্দ্র দেবনাথ ও মো. জাকির হোসেনকে অন্যায় বিচারের মাধ্যমে মৃ/’ত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তারা অন্যায় ও ভুল বিচারের শিকার হওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন এবং সরকারের পুনর্বাসন চাইতে পারবেন।
মামলায় অন্যায় বা ভুল বিচারের বিষয়ে আইনজীবী বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় ভিকটিম শি/’শুর মাথা পাওয়া গেছে। কিন্তু গাজীপুরের জয়দেবপুরের শালবনের ভেতর থেকে তার দেহ পাওয়া গেছে। পোস্টম”র্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, পাওয়া মাথাটি ৮-১০ বছর বয়সী একটি শি/’শুর। অন্যদিকে, শাল জঙ্গলের ভেতর থেকে পাওয়া দেহের অংশটি ১৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তির।
অন্যদিকে আইন অনুযায়ী গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে সোপর্দ না করার দুই থেকে তিন দিন পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। এ সব কারণে আদালত এটিকে বিভ্রান্তিকর বিচার বলে রায় দিয়েছেন।
এর আগে জানুয়ারিতে ভাওয়ালের শালবনে শি/’শু হ’/’ত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত দুই ব্যক্তিকে খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই দিন আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ডেথ রেফারেন্স মামলায় হাইকোর্ট দুজনকে খালাস দিয়েছেন। তবে পুলিশ সাক্ষ্য দিতে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেন তিনি।
২০১৬ সালের মার্চে মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে মোঃ রাজীব ওরফে গোলাম রব্বানী ওরফে শংকর চন্দ্র দেবনাথ ও মোঃ জাকির হোসেনকে ঢাকার একটি আদালত মৃ’/ত্যুদ”ণ্ড দেন।
বিধি মোতাবেক ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এছাড়া আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার শাহজাহানপুর ওভারব্রিজের নিচ থেকে স্থানীয় লোকজন শংকর ও জাকিরকে ব্যাগসহ আটক করে। তাদের ব্যাগে একটি ছেলের কা”টা মা’থা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের পর ২০১৬ সালের মার্চে বিচার শেষে তাদের মৃ’/ত্যুদ”ণ্ড দেওয়া হয়। পরে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন।
প্রসংগত, একজন বিচারপ্রার্থী যখন ভুল বিচারের মুখোমুখি হয়ে সাজা প্রাপ্ত হন, তখন ওই বিচারপ্রার্থীদের পরিবারের সদস্যসহ মানুষেরা বিচার বিভাগের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। সে দিক থেকে বিচার বিভাগের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সঠিক বিচার না পাওয়ায় অনেক সময় বিচার বিভাগও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এমনও দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে হাজতবাস করার পর কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ প্রমাণিত হয়, যার কারণে জীবনের বড় একটি অংশ তার জীবন থেকে ঝরে যায়।