গত বৃহস্পতিবার ১৬ ডিসেম্বর নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। অবশ্যে স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে ডিসেম্বর মাস জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আায়োজন করে থাকে বাংলাদেশ সরকার। তবে এবারের অনুষ্ঠান একাবারেই ভিন্ন। এবারের বিজয় দিবসে ৫০ বছর পূর্ন হয়েছে বাংলাদেশের। এই ৫০ বছরের সূবর্নজয়ন্তিকে ঘিরে ১৬ ডিসেম্বর সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় পোডিয়ামে দেখা যায় ‘মুজিববর্ষ’ বানানটি ভুল, সেখানে লেখা হয়েছে ‘মুজিবর্ষ’। এই নিয়ে চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ‘মুজিববর্ষ’ বানান ভুলের ‘ব্যাখ্যা’ দেওয়া নিয়েও বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানের পরপরই ‘মুজিববর্ষ’ বানান ‘মুজিবর্ষ’ লেখা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এত বড় আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ এই শব্দের ভুল মেনে নিতে পারছিলেন না নেটিজেনরা। এরপরও এটা কেন ঘটলো তার কারণ সাংবাদিকদের জানান মিডিয়া কনসালটেন্ট আসিফ কবীর। ১৬ ডিসেম্বর সেই ব্যাখ্যা তিনি একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে দেন। সেখানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া হয়, তার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করা যাবে কিনা। তখন সম্মতি দেন তিনি। এরপর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ব্যাখ্যা’ আকারে সেটা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিভ্রাট ঘটে তখনই যখন শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে এই ‘ব্যাখ্যা’র বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে গঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়ক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, ‘কোনও ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়নি।’
তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে, যিনি ভুল বানানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি সেটি না জেনে দিয়েছেন কিনা? দ্বিতীয়ত, প্রায় গত দুবছর ধরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি যারা করেন, তাদের অনেকেই সেই মেসেঞ্জার গ্রুপে উপস্থিত থাকলেও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ কেন করেননি। গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বলছেন, বানান ভুল এবং ব্যাখ্য দেওয়ার পর সেই ব্যাখ্যা অস্বীকার করলে বোঝা যায়—যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আসলে দায়িত্বটা পালনের যোগ্য নন। আর এ ধরনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার যে প্রবণতা সেটাও দুঃখজনক।
গাজী টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, যে ভুল হয়েছে সেখানে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। দায় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। আবার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে টেক্সট দেওয়া হলো সেটাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাতেও বানান ভুল। এর মানে হলো, সবকিছুর মধ্যে অপেশাদারিত্ব। যোগাযোগের ছাত্র হিসেবে আমি যেটা মনে করি, ভুল হতেই পারে। সেই ভুল স্বীকার করে নিতে হবে। এ ধরনের আয়োজনে ‘আমি’ বলে কোনও কথা থাকতে পারে না। ‘আমরা’ হিসেবে চিন্তা করতে জানতে হবে। সামগ্রিকতার একটা ব্যাপার থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী (মিডিয়া সেন্টার) নামের সেই মেসেঞ্জার গ্রুপে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১২৩ জন সাংবাদিক রয়েছেন। একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্নসময় নিউজ ও প্রেস রিলিজ পেয়ে আসছেন তারা। এখানে দেওয়া কোনও বার্তা আন-অফিসিয়াল হওয়ার সুযোগ নেই। তারা বলছেন, আসিফ কবীর ‘ব্যাখ্যা’ দেওয়ার পর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এটি ব্যবহার করা যাবে কিনা? তখন তিনি বলেন, ‘তাকে কোট করে এটা দেওয়া যাবে’। ফলে সব গণমাধ্যম তখন নিউজটি করেছে।
এ বিষয়ে কামাল নাসের চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা ভুল হয়েছে। বানান ভুল কেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’। তবে তিনি এও বলেন, ‘আমাকে উদ্ধৃত করে যারা সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের সঙ্গে আমার আলাপ হয়নি’। এ বিষয়ে মিডিয়া কনসালটেন্ট আসিফ কবীর জানান, যেটি গ্রুপে (সাংবাদিকদের মেসেঞ্জার গ্রুপ) বলছি সেটি প্রাথমিক অনুসন্ধানের ধারণা মাত্র। অনেকেই ইভেন্ট চলার মধ্যেই এর কারণ নিয়ে জানতে চাচ্ছিলেন। মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে, প্রাথমিকভাবে অনানুষ্ঠানিক এই মেসেজটি দেওয়া হয়। প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়ের সঙ্গে কথা না বলেই কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিবেদন করেছে। তিনি সেটি নাকচ করেছেন। সেসব গণমাধ্যমের পক্ষ থেকেও পরে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ন অনুষ্ঠানে এমন ভুল সমাজের অনেকেই এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠেছে। এমনকি বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এই ভুলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর শপথ বাক্য পাঠ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এই ভুল বাননাকে ঘিরে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর শপথও ভুলে ভরা।