বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরেই কর্মের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়ে থাকে অসংখ্য নাগরিক। তবে এক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ নানা পন্থা অবলম্বন করে থাকে নাগরিকরা। অবশ্যে অবৈধ ভাবে পাড়ি দেওয়া শ্রমিকরা নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। এমনকি অনেকে ক্ষেত্রে জীবনও হারাতে হয়। এরই সুবাধে সরকার বৈধ ভাবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে মালয়েশিয়া। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সির সিন্ডিকেশনসহ নানা অনিয়মে বন্ধ ছিলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া। তবে সুখবর হলো বিনা খরচে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হতে পারে দুই দেশের মধ্যে। তবে এবার ভিসা প্রসেসিংয়ে সকল এজেন্সির সমান সুযোগ চান বায়রা। আর জাতীয় তথ্য ভান্ডার করে দালালদের দৌরাত্ম বন্ধের পরামর্শ বিশ্লেষকদের। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেয়া শুরু হয়েছিলো ২০১৬ সালে। তবে মাত্র ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সি এই ভিসা প্রসেসিং এর সুযোগ পায়। দুই দেশের চুক্তিতে বিমান ভাড়াসহ সব মিলেয়ে খরচ প্রায় দুই হাজার রিংগিত নির্ধারিত থাকলেও এই এজেন্সিগুলো জনপ্রতি আদায় করতো ২০ হাজার রিংগিতেরও বেশি। সীমাহীন এই অনিয়মের কারণে চুক্তির দুই বছরের মাথায় শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবারো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। করোনা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেই কর্মী নেয়া শুরু করবে দেশটি। সমঝোতা চুক্তির খসড়া অনুযায়ী বিনা খরচে ভিসা প্রাপ্তিসহ আহতরা পাবে আজীবন পেনশন। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
একজন বলেন, সরকার যদি ইনিশিয়েসিভ ভালো নেয়, আমাদের মধ্যে যে একটা দলাদলি আছে (যেমন আমি একটা জিনিস পাঁচ টাকা কিনছি আরেকজন গিয়ে বললো আমি তোমাকে দশ টাকা দিব) এই জিনিসটা যদি না থাকে তাহলে আমি মনে করি অনেক কম খরচে যাত্রীরা যেতে পারবে। আরেকজন বলেন, আমরা তো সবসময় আশাবাদী মালয়েশিয়াতে যখন নতুন দ্বার উন্মোচিত হয় তখন হয়ত ভালো একটা কিছু হবে। পরে সরকারের সঠিক মনিটরিংয়ের জন্য আসলে কোনকিছুই শেষ পর্যন্ত ঠিকভাবে হয় না। এবার মালয়েশিয়ার ভিসা প্রসেসিং’র সুযোগ সকল বৈধ এজেন্সির অংশগ্রহণ চান বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী। বলেন, এতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কম খরচে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে এজেন্সিগুলো সচেতন থাকবে।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, এ বিষয়ে আমি দুই সরকারের কাছে (মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ) সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি এই মার্কেট যেনো সব সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রায় খরচ কমাতে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধের পরামর্শ বিশ্লেষকদের। এ বিষয়ে পিআরআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ বিষয়টা যদি বন্ধ করতে হয় তাহলে আমি মনে করি সরকারের সঠিক ডাটাবেজ থাকা উচিত। প্রত্যেকটা কোম্পানিকে এই ডাটাবেজ থেকেই নিতে হবে। এবার প্রতারণা ঠেকাতে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি সংশ্লিষ্টদের।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রনী ভুমীকা পালন করে থাকে। প্রতিবছরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ প্রবেশ করছে। এমনকি সম্প্রতি এই বৈদেশিক আয়ে বাংলাদেশ রেকর্ড গড়েছে। এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে অর্থের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই খাতের আয় আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রবাসীদের প্রদান করছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।