Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / National / ভিসা নীতির রেশ না কাটতেই ভারতের সঙ্গে যে জটিলতায় বাংলাদেশ

ভিসা নীতির রেশ না কাটতেই ভারতের সঙ্গে যে জটিলতায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বাণিজ্যের দায় শোধেও জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) সে দেশের ব্যাংকগুলোকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সঙ্গে সম্পর্কিত লেনদেন নিষ্পত্তি না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। আকুর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশও এর জন্য ভুগতে হবে। বিশেষ করে আকুরের সুফল নিয়ে বাকি দেশের আমদানি শুল্ক পরিশোধের যে সুযোগ বাংলাদেশ পাচ্ছিল, তা নিয়ে এখন সংশয় দেখা দেবে। বাংলাদেশ তার আমদানি বাধ্যবাধকতা নগদে পরিশোধ করতে বাধ্য হবে, যা ডলার সংকটের এই সময়ে বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আকু মূলত একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। আকুরার সদস্য দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এর প্রধান কার্যালয় ইরানের রাজধানী তেহরানে। আকুর মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা হল যে সদস্য দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলিকে লেনদেনের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে না, তবে তাদের একে অপরের কাছে যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা যেতে পারে। সংস্থার ৯টি দেশের মধ্যে আমদানি বিল সাধারণত মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের মাধ্যমে দ্বিমাসিকভাবে প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ-ভারতসহ ৯টি দেশের বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ায় আকুর সংক্রান্ত কোনো লেনদেন নিষ্পত্তি না করতে মার্কিন ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ওএফএসি।

বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারে দায় শোধে বাধার কারণে ভারতের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে সব ধরনের বাণিজ্য। বিকল্প মুদ্রা হিসেবে রুপি ও ইউরোতে লেনদেনের সুযোগ আছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে যে পরিমাণ আমদানি করে, সে পরিমাণ রুপি বা ইউরো বাংলাদেশের হাতে নেই। এতে ঝুঁকিতে থাকা ডলার মজুতে আরও চাপ পড়বে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও পিডব্লিউসির কান্ট্রি পার্টনার মামুন রশিদ বলেন, “ইরান ও মায়ানমারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে আকুর লেনদেনের নিষ্পত্তিতে এখন যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে। অনেকটা নেতিবাচক।কারণ, বাংলাদেশ আকুরের সুবিধা নিয়ে বাকি আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে পারে।আমরা একটি আমদানিকারক দেশ হওয়ায় বড় ধরনের আমদানির কারণে দায় পরিশোধের কারণে ভালো লাভ হয়েছে।এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষতি করবে।কিন্তু ভারত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের রপ্তানি কমবে।আমাদের ক্ষতি হলো- আগে আমরা ভারত থেকে আমদানি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারতাম, এখন অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হলে নগদ ডলারে করতে হবে।বাংলাদেশ কোথায় যাবে? এত ডলার পান?আমাদের কাছে ডলার নেই।কারণ আমরা ডলার ক্ষুধার্ত দেশ।’

তথ্য-উপাত্ত বলছে, আকুর সদস্য ৯ দেশের মধ্যে শুধু ভারতই নিয়ন্ত্রণ করে ৯৩ শতাংশ বাণিজ্য। আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে গত ছয় মাসে বাংলাদেশের গড় লেনদেনের পরিমাণ দেড় বিলিয়নের বেশি। এর মধ্যে ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ শুধু ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আর মাত্র ৫-৬ শতাংশ আমদানি হয় ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে।

রত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখন কমবেশি ২ বিলিয়ন ডলারের সমান। ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলার। যদি ডলারে লেনদেন বন্ধ করা হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রুপিতে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। ভারতের আমদানি বিল প্রধানত বাংলাদেশ ব্যাংক আকুর বিল হিসাবে ডলারে প্রদান করে। ফলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আর এমনটা হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও জীবনযাত্রায় অন্য প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ বলেন, মনে হচ্ছে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশ ডলার থেকে থেকে বেরিয়ে এসে এবং অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। যে কারণে এটি চাপ হতে পারে। তবে আমি মনে করি এটি একটি পুরানো পদ্ধতি। এটি ডলারে নিষ্পত্তি করা হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এখানে ডলারের দাপট কমছে না। আশা করি দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে।

আকুর ৯ দেশের মধ্যে আমদানি বিল সাধারণত মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের মাধ্যমে দ্বি-মাসিক পরিশোধ করা হয়। গত মাসে আকু বিল বাবদ ১.২০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইতে আকুর আমদানি বিল ছিল ১ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার।

ডলার যে হারে কমছে, তাতে এরই মধ্যে তা আইএমএফের ঋণের শর্তের মাত্রা ২৪ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কমে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামনে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিও আটকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ভারতীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তেহরানভিত্তিক আকুতে লেনদেনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সে বিষয়ে আমরা এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি। আকুর সেক্রেটারিয়েট (ব্যবস্থাপনা কমিটি) এ বিষয়ে তাদের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়ে সদস্যদেশগুলোকে জানাবে। এরপর এই বিষয়ে কথা বলা যাবে। তবে যদি আকুর মাধ্যমে পেমেন্ট না করা যায়, তাহলেও তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে সুইফটের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা হবে।’

এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আকুর ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার কোনো ভূরাজনৈতিক ইস্যু থাকতে পারে। এটা ছোট করে দেখার বিষয় না। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

About Rasel Khalifa

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *