Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / International / ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর, ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশি কূটনীতিক আরিফা রহমান রুমার কান্ড

ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর, ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশি কূটনীতিক আরিফা রহমান রুমার কান্ড

আরিফা রহমান রুমা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (পাবলিক কূটনীতি)। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রুমা প্রথমে চুক্তিভিত্তিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন এবং পরে (কয়েক বছর আগে) ওয়াশিংটন ডিসিতে বদলি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রুমা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। তার বাবা গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সী আতিয়ার রহমান এক বছর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

তবে এই বাংলাদেশি কূটনীতিকের নতুন করে আলোচনায় আসার কারণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রুমার পোস্ট ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ২৪শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১:২২ মিনিটে, তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, “একজন ঘুষ গ্রহণকারী দুর্নীতিবাজের অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস থেকে শুরু করে যেখানে বারবার স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের এবং বিশেষ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসার বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকা ব্যক্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যই ভিসা বিধিনিষেধ, সেখানে এই বিধিনিষেধ কীভাবে গোটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হলো- এ প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাছাড়া, এই ধরনের অপরাধীদের তিরস্কার করা কীভাবে ‘অন্যায় আচরণ’ তা প্রশ্ন করতে ভোলেননি তারা।

প্রাক্তন (আগের টুইটার) রুমা ইংরেজিতে যা লিখেছেন তা বাংলায় দাঁড়ায়: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অযাচিত নিষেধাজ্ঞা সক্রিয় পুনর্বিবেচনার যোগ্য। কারণ এটি এমন একজন ব্যক্তি দ্বারা জারি করা হয়েছিল যিনি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। এখানেও তিনি ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা’ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন বিশ্বের অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা কেউ জানে না!
আরেকটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হল যে রুমা ফেসবুকে দাবি করেছিলেন যে ‘একজন ঘুষ গ্রহণকারীর অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত’ – তবে X-তে তিনি লিখেছেন, ‘…এমন একজন ব্যক্তি কর্তৃক এটা জারি করা হয়েছিল যিনি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত’। অবশ্য পরে তিনি বাংলাদেশ সময় ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট (পরিবর্তন) করেও লিখেছেন, ‘একজন ঘুষখোর এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায্য আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত’।

রুমার স্টাটাস পরিবর্তনের কারণ?

রুমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ রাজনীতিবিদ নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেনডেজের কথা উল্লেখ করেছেন বলে মনে করা হয়। রুমার পোস্টে বব মেনেন্ডেজ সম্পর্কে তার ফেসবুক বন্ধুদের মন্তব্য এবং রুমার নীরবতা সেই ইঙ্গিত বহন করে। এরপর রুমা সিনেটরকে ‘দুর্নীতিবাজ’ সার্টিফিকেট দেওয়ায় বিষয়টি উঠে আসে। কারণ ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠার পর মেনেনডেজ মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে মামলার নিষ্পত্তি না হলেও রুমা তাকে ‘ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ’ বলেছেন। যাইহোক, রুমা পরে ‘ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ’ লেখা পরিবর্তন করে ‘ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে’ লেখে।

বব মেনেনডেজকে আক্রমণের কারণ: স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন রুমা বব মেনেনডেজকে আক্রমণ করছেন? তদন্তে জানা গেছে যে ২০২০ সালের অক্টোবরে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর বব মেনেনডেজ ছিলেন মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির ১০ জন সদস্যের একজন যিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে র‌্যাবের সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, বাংলাদেশে গুম ও নির্যাতন নিয়ে। ঠিক এক বছর পরে (বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন) র‌্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসে।

বব মেনেনডেজ ছাড়াও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর বেন কার্ডিন, জিন শাহীন, ক্রিস মারফি, ক্রিস কুনস, জেফ মার্কলে, কোরি বুকার এবং রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর টড ইয়ং, কোরি গার্ডনার, মার্কো রুবিওও চিঠিতে সই করেন,রুমা কেন শুধু একজনকেই (মেনেনডেজ) আক্রমণ করেছেন তার কারণ বোঝা যায় নি। নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন করছেন, যদি ভবিষ্যতে প্রমাণিত হয় যে মেনেন্দেজ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাহলে বাকি ৯ সিনেটর সম্পর্কে রুমা কী বলবেন? তাছাড়া র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না দেওয়া, ভিসার সীমাবদ্ধতা আরোপ- এসবের জন্য কি একজন সিনেটর বব মেনেনডেজ দায়ী?

About Nasimul Islam

Check Also

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের অভিযোগ, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দাবি তোলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *