পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দিন অর্থাৎ ২৬ শে জুন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। ঐদিন সেতুর ওপর দুই যুবক প্রয়াত হন। তারা দুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। অনেকে এই দূর্ঘটনার বিষয়ে ধারণা করেছিলেন যে তাদের গাড়ির বাইকের বেপরোয়া গতির কারণে তারা দুর্ঘ”টনার শিকার হন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের গতিতে বাইক চালানোর একটি ভিডিও প্রকাশ হয়, সেখানে দেখা যায় বাইক চালানোর সময় তারা তাদের বাইকের গতি তোলে ১০৫ কিলোমিটার।
কিন্তু নতুন আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শুধু দ্রুতগতিতে নয়, প্রাইভেট কার থামিয়ে সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্যও পদ্মা সেতুতে অকালে ঝরে পড়ে দুটি প্রাণ।
সেতু উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিন রোববার (২৬ জুন) রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘ”টনার নতুন ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আর তা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
স্বপ্নের সেতু পদ্মা বাঙালিকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে দিলেও এরই মধ্যে জন্ম দিয়েছে বিষাদ। উদ্বোধনের পরের দিন, দুই যুবককে বাইকে করে সেতু পার হতে হয় এবং করুণ পরি”ণতির শিকার হতে হয়। দ্রুতগামী বাইক থেকে পড়ে আলমগীর ও ফজলু নামে দুই যুবক গুরু”তর আহ’/ত হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়াত হয়েছেন এমন ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পর থেকে অভিযোগের তীর ছুটেছে প্রয়াত দুই যুবকের দিকে। বাইকটি দ্রুত গতিতে থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন বলে জানা গেছে।
তবে ৭ দিন পর দুর্ঘটনার নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের স্লো মোশন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুটি বাইক একটি ব্যস্ত রাস্তায় চলছে৷ দুটি বাইকের ডানদিকে একটি কাভার্ড ভ্যান এবং বামদিকে একটি প্রাইভেট কার চলছিল। প্রথম বাইকটি একই গতিতে এগিয়ে যেতেই সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। প্রথম বাইকটি সং/’ঘ”র্ষের পর নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় বাইকটি দুর্ঘটনায় জড়িত তিনজনকে বাঁচাতে উল্টে যায়। অকালে প্রাণ হারান আলমগীর ও ফজলু।
বাইক দুর্ঘটনার নতুন ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই দুর্ঘ”টনার জন্য ব্যস্ত সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলাকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রয়াত আলমগীর ও ফজলু ঢাকার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা। আলমগীর পেশায় একজন মোটরসাইকেল মেকানিক এবং ফজলু ছিলেন প্রবাসী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তারা তিন বন্ধুর সঙ্গে তিনটি মোটরসাইকেলে বেড়াতে গিয়েছিল।
গত শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। ওই দিন জনসাধারণকে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও পরদিন সকাল থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
রোববার (২৬ জুন) রাতে সেতুর পিলারের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু প্রয়াত হন।
মোটরসাইকেল চালানোর সময় তোলা ভিডিওতে দেখা যায় আলমগীর মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এবং ফজলু তার পেছনে বসে আছেন। তারা অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সব যানবাহনকে ওভারটেক করে। সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে মোটরসাইকেল চালানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা তা ভেঙে বেপ”রোয়া গতিতে চালাচ্ছিল। ধীরে ধীরে মোটরসাইকেলের গতি ৯০, ৯৫, ১০০ থেকে বেড়ে ১০৫ হতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সেই গতি কমে ৭০-এ এ চলে যায়। তারপর হঠাৎ ডানদিকে থাকা মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। এতে চালক ও আরোহী গু”রুতর আ’হ/ত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের প্রয়াত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনা ছাড়াও সেতুর উপর বাইক চালকেরা অধিক ভীড় করবে এবং যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে ঘটাবে, এ কারণে সেতু কর্তৃপক্ষ সাময়িক সময়ের জন্য সেতুর উপর বাইক চলাচল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে করে বিপাকে পড়ে অনেকে, বিশেষ করে যারা বাইক নিয়ে অন্য প্রান্তে যাওয়ার পর ফিরে আসতে যায়। বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের অনেককে পিকআপ এর উপর মোটরসাইকেল উঠিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে দেখা গেছে।