Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ভিওএ’র প্রতিবেদন: নতুন প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন নিয়ে

ভিওএ’র প্রতিবেদন: নতুন প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন নিয়ে

বাংলাদেশের সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একতরফা ভোট দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার আশঙ্কাকে বাস্তবে পরিণত করতে চলেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে। ‘এক পক্ষের শাসনের একতরফা বাংলাদেশ নির্বাচনের উত্থান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কয়েকটি দল নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করলেও বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ভোটগ্রহণ এবং এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশে গত রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিরোধীদের বিক্ষোভ বাধা দেওয়া হয়। কখনও কখনও সেই দ/মন-পী/ড়ন স/হিংসতায় রূপ নেয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর এমন দ/মন-পী/ড়নে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস। রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তিনি। ভোটগ্রহণের পর সংবাদ সম্মেলনে জিম বেটস বলেন, আমি বলব এতদিন এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল। কিন্তু ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক ইমেল বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি। যারা এটা নিয়ে কথা বলছেন তারা তার ব্যক্তিগত মতামত। তার বা তাদের মন্তব্য ফেডারেল সরকারের নয়।

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। আমরা এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না করার নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় এবং তার আগের মাসগুলোতে সংঘটিত স/হিংস ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস বিরোধীদলীয় নেতাদের নির্বিচারে আটক বা ভয় দেখানো হয়েছে। এই কৌশলটি সত্যিকারের খাঁটি প্রক্রিয়ার জন্য উপযোগী নয়। তিনি সকলের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পশ্চিমা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পৃষ্ঠপোষক বলে দাবি করে, তারা নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা করেছে, চীন এবং রাশিয়া, যারা তাদের একতরফা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তাদের অনেক ঘনিষ্ঠ তৃতীয় বিশ্বের মিত্ররা নবনির্বাচিত হাসিনা সরকারকে তড়িঘড়ি করে অভিনন্দন জানায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত প্রথমে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। এই নিরঙ্কুশ জয়ের প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভিওএর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে বিরোধী জোট নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে, নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই দাবি নাকচ করে দিলে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সরকারকে সহযোগিতা না করতে এবং নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী, ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়া, পর্যবেক্ষক, মানবাধিকার সংস্থা এবং এমনকি যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের একটি অংশ এই সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই সন্দেহের অন্যতম কারণ ভোটার বৃদ্ধি। নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার উপস্থিতি ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। বিরোধীরা বলছেন, ভোটগ্রহণের শেষ ঘণ্টায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের দাবি গুরুতর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তথাকথিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যারা মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতা,২৮০টি আসন পেয়েছে। ফলে জাতীয় সংসদের ৯৪ শতাংশ আসন ক্ষমতাসীন দলের দখলে। নির্বাচনে ২৭টি দল প্রার্থী দিলেও তাদের মধ্যে মধ্যে ২৩টি দল একটি আসনও জিততে পারেনি।

এক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তার দল ১১টি আসন পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যার ইচ্ছা জয়ী হয়। আমি মনে করি এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ গ্লোবাল নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর লাজুরকে কেন্দ্র করে একটি পুতুল বিরোধী দল তৈরির চেষ্টা করছে, যারা মূলত ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন-পরবর্তী দুটি ঘটনায় বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে নতুন সরকার বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেতাকর্মীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে।

About Babu

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *