শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা দলকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রায় ৩০-৪০ জন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়, এটি “সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের অংশ”, এবং প্রতিবেদনটি “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যপূর্ণ”।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আ ক ম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান ও মাহবুব-উল আলম হানিফের বক্তব্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা স্বীকার করেছেন, শাসনব্যবস্থায় কিছু ভুল ছিল এবং এখন দল পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে তাঁরা দাবি করেন, বর্তমানে দেশে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নেই।
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “আওয়ামী লীগের হাজারো নেতা-কর্মী এখনো আত্মগোপনে আছেন, অনেকে অর্থকষ্টে ভুগছেন। তবে তৃণমূলের মনোবল অটুট রয়েছে।”
নাহিম রাজ্জাক বলেন, “আমাদের অধিকাংশ নেতা জামিন পাচ্ছেন না। দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা আছে।” তিনি জানান, দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভারতে থাকা নেতারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমি প্রতিদিন ২০০-৩০০ কর্মীর ফোন কল পাই। আমরা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত আছি। দেশে আইনের শাসন ফিরলে আমরা বিচার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতে থেকেই দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত আছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আওয়ামী লীগ অতীতেও বিরোধী দলে ছিল, তবে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে আছেন, অনেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের আগের ঘটনাগুলোর জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে দায়ী করা অন্যায্য।”
তিনি আরও বলেন, “যদি শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকেও হওয়া উচিত।”