ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই ঘটনায় গভীর গুরুত্ব সহকারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর), মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই হামলা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে, যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন যে, সব পক্ষের উচিত তাদের মধ্যে মতবিরোধ এবং সমস্যা শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা। এই আহ্বানটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বেশ টানাপোড়নে রয়েছে। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, যা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যান, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নতুন করে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার ঘটনাও এই পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সম্প্রতি ইসকনের নেতা চিন্ময় দাস গ্রেপ্তারের পর ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো ঘোলাটে অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
গত ২ ডিসেম্বর, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে একটি গুরুতর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শুধু ক্ষোভ প্রকাশেই শেষ হয়নি, ঘটনার এক দিন পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভ জানিয়েছে।
বাংলাদেশের এই প্রতিক্রিয়া ভারতের পক্ষ থেকেও সমর্থন পেয়েছে। ভারত এই হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তদন্তে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তদ্ব্যতীত, ভারত তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে।
এই ঘটনাগুলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি আরো তীব্র করেছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি, ঢাকায় সফর করেছেন। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সফরকালে, বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন যে, ভারত সব ধরনের প্রচেষ্টা করবে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং উন্নয়নের জন্য। তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগ্রহী।’
যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত প্রদান করছে। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ সমাধানের তাগিদ দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্দেশনা। এই ধরনের আহ্বান প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, একটি স্থিতিশীল এবং শান্তি বজায় রাখার পরিবেশে বিশ্বাসী।
পরিস্থিতির সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত মতবিরোধ কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান এবং প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলের সম্পর্ক এবং সহযোগিতার গুরুত্বকেও তুলে ধরে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এই চলমান টানাপোড়নের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হতে পারে। সরকারের উচিত এই আহ্বানের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিয়ে সমস্ত পক্ষের মধ্যে উন্মুক্ত এবং সদিচ্ছাপূর্ণ আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা এবং আলোচনা একটি স্থিতিশীল অঞ্চল এবং শক্তিশালী সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য।