Thursday , December 26 2024
Breaking News
Home / National / বাংলাদেশের তুলনায় দাম বেশি, ভারতে পাচার হচ্ছে ডলারে কেনা ডিজেল

বাংলাদেশের তুলনায় দাম বেশি, ভারতে পাচার হচ্ছে ডলারে কেনা ডিজেল

অতিরিক্ত মূল্যে ডলার দিয়ে বাংলাদেশের জন্য কেনা জ্বালানি তেল পাচার হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় জ্বালানি তেল পাচারের এ ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুব কম। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামের পার্থক্যের সুযোগে পাচারকারীরা বেশ তৎপর। এ কারণে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানির দাম নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের তুলনায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশটিতে কম দামে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে দামের পার্থক্যের কারণে উচ্চ ডলার দিয়ে কেনা জ্বালানি তেল দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকায় ভারতের কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ডিজেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৯২.৭৬ টাকায়। বাংলাদেশী টাকায় এর দাম প্রায় 123 টাকা। আর দেশে এখন ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। ফলে কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে ১৪ টাকা বেশি। এছাড়াও দেশের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ত্রিপুরায় ডিজেল প্রতি লিটার 88.58 টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় 117 টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় ত্রিপুরায় ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেশি। আগরতলায় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম 88.51 টাকা। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় 117 টাকা। অর্থাৎ আগরতলায় ডিজেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেশি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে দামের এই বিশাল পার্থক্যের কারণে দেশ থেকে প্রতিবেশী দেশে ডিজেল পাচার হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হচ্ছে, চাপ বাড়ছে রিজার্ভের ওপর। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ফর্মুলা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে না চলায় এবং জ্বালানি তেলের শুল্ক মূল্যের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দামের এই পার্থক্য। বিদ্যমান মূল্য নির্ধারণের সূত্র কখনোই তেল চোরাচালান রোধ করতে পারবে না। তাই তেল চোরাচালান রোধে চালান মূল্যের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করে মূল্য নির্ধারণের কোনো বিকল্প নেই।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমরা যখন এলসি করি তখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডলারের মূল্য ১১০ টাকা নিলেও পেমেন্ট করতে গিয়ে তাদের দিতে হয় ১২৩ টাকা। বেসরকারি জ্বালানি তেলের কাঁচামাল আমদানিকারকদের প্রতি ডলারে অতিরিক্ত ১৩ টাকা দিতে হয়। BPC জ্বালানি আমদানির উপর শুল্ক মূল্য নির্ধারণ করে ($40 প্রতি ব্যারেল), যা প্রাইভেট সেক্টরকে দিতে হয় তার দ্বিগুণেরও বেশি। এতে বেসরকারি তেল আমদানিকারকদের ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ছে। যা মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এমনিতেই ডলারের সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় তেল পাচার হলে এ সংকট আরও তীব্র হবে। কারণ চাহিদা মেটাতে বিপিসিকে বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। তাই ডিজেলের দাম প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে কোনোভাবেই ডিজেল পাচার রোধ হবে না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, তেলের সঙ্গে ডলারের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তেলের চাহিদা বাড়লে ডলারের ওপর চাপ বাড়ে। বাংলাদেশ থেকে তেল পাচারের অভিযোগ সব সময়ই ছিল। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম নির্ধারণ না হলে এই অভিযোগ থেকে যাবে। ডলারের সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা জরুরি। স্বয়ংক্রিয় মূল্য চালু করা ভাল। এটি করা হলে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ব্যবস্থা কার্যকর হবে। পাশাপাশি চোরাচালানের ঝুঁকিও থাকবে না।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে শুধু ডিজেলের চাহিদা ৫০ লাখ মেট্রিক টন। গত 2022-23 অর্থবছরে, সরকারকে জ্বালানী তেল আমদানিতে পাঁচ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছিল। জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপুল পরিমাণ ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে মজুদের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “জ্বালানি তেলের চোরাচালান দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আগে তা কম হতো, এখন স্থলবন্দরে তেল পাচার অনেক বেড়ে গেছে। সরকার চাইলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পথে জ্বালানি এবং পণ্যবাহী ট্রাক আসা।আরেকটি সমাধান হতে পারে, আর তা হলো- আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়।এটা সরকারের করার কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত করা হয়নি। এসব কারণে জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে সমন্বয় করতে হবে

About Zahid Hasan

Check Also

মারা যায়নি আবু সাঈদ, আছেন ফ্রান্সে রনির এমন মন্তব্যে নিয়ে যা জানা গেল

সম্প্রতি টিকটকে পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *