ভারতে গত আট বছর ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আটকা পড়েছেন। শিলংয়ের ভারতীয় আদালত ইতিমধ্যেই অনুপ্রবেশের মামলায় তাকে খালাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফিরতে তার কোনো বাধা নেই। তবে দেশে ফিরতে পারছেন না বিএনপির জনপ্রিয় এই নেতা। তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ভারত থেকে আসা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জজকোর্টের রায়ের পর পরই মার্চের শুরুর দিকে মেঘালয় সরকারের কাছে সব নথিসহ আবেদন করি আমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে।
আবেদন না করলেও তারা আদালতের রায়ের ওপর ভিত্তি করেই আমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারত। অথচ আবেদন করার পর এতগুলো মাস কেটে গেলেও তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাইনি। তাই দেশে ফিরতে পারছি না।
কেন দেশে ফেরেননি জানতে চাইলে শিলং থেকে মুঠোফোনে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, অনেক সংগ্রামের পর ট্রাভেল পারমিট পেয়েছি। এটার মেয়াদ ছিল তিন মাস, গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ‘বিদেশে আসার পর পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দূতাবাসে আবেদন করে ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়া যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে এর জন্য যে দেশের যে এলাকায় পাসপোর্ট হারিয়েছেন, ওই থানায় জিডি করে নিজ দেশের দূতাবাসে যেতে হয়। দূতাবাসের দেওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে হয় ওই দেশের ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে এবং এক্সিট পাস নিতে হয়। এর পর এই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে নিজ দেশে ফেরা যায়। ’
কিন্তু আমার ক্ষেত্র ভিন্ন। আমি আবেদনের সাথে রিটটি সংযুক্ত করে লিখেছিলাম— আমি এখানে বন্দি আছি, আমাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিলে সেটি আমাকে সাহায্য করবে। আবেদনের সঙ্গে আমার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো পাসপোর্টের কপিও দিয়েছিলাম। প্রথমে তো বাংলাদেশ দূতাবাস আমার আবেদন গ্রহণই করতে চায়নি। পরে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে সেটি গ্রহণ করে এবং ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করে’
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন মনে করেন, তিনি যে পরিস্থিতিতে ভারতে আছেন, দেশে ফিরতে তার কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্টের প্রয়োজন নেই।
তার মন্তব্য- ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চাইলে আদালতের রায় অনুযায়ী আমাকে দেশে পাঠাতে পারে। আদালত মেঘালয় রাজ্য সরকারকে নিয়ম অনুযায়ী আমাকে দেশে পাঠাতে পারে সেই নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকার নথি ঠিক করে আমাকে দেশে পাঠাবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও আমাকে রিসিভ না করে পারবে না।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম করেছে। ৬৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আদালতে বলেন, তাকে উত্তরার বাসা থেকে অপহরণ করা হয়েছে।
পরে কেউ তাকে শিলংয়ে রেখে যায়। গত মার্চে এ মামলায় আপিলের রায় ঘোষণা করেন আদালত। চূড়ান্ত রায়ে তিনিও খালাস পান। আদালত তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশও দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনবারের সাবেক এই সাংসদ বিএনপি সরকারে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এর আগে দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।