Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ভারতে অবাধে পাচার হচ্ছে রিজার্ভের ডলারে কেনা ডিজেল

ভারতে অবাধে পাচার হচ্ছে রিজার্ভের ডলারে কেনা ডিজেল

বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা জ্বালানি তেল অন্য দেশে পাচার হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশে ডিজেলের দামের বড় পার্থক্য থাকায় এই জ্বালানি তেল অবাধে পাচার হচ্ছে।

সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুব কম। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামের বড় ব্যবধানের সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারীরা তৎপর। এ জন্য তারা সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে দাম নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সোমবার কলকাতায় ডিজেল প্রতি লিটার ৯২.৭৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বাংলাদেশী টাকায় ১২৩ টাকা। চেন্নাইয়ে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশি টাকায় ১২৫ টাকা। মুম্বাইতে এক লিটার ডিজেলের দাম ৯৪.৩৩ টাকা, যা বাংলাদেশী টাকায় ১২৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১০৯ টাকা।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সাথে ডিজেলের দামের পার্থক্য প্রতি লিটার ১৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা। দামের এই পার্থক্যের কারণেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে ডিজেল। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হচ্ছে, চাপ বাড়ছে রিজার্ভের ওপর।

অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে কার্যকর না থাকায় এবং জ্বালানি তেলের শুল্ক মূল্য নির্ধারণ করে মূল্য নির্ধারণ করায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দামের পার্থক্য মূলত তৈরি হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে ডলারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ তেলের চাহিদা বাড়লে ডলারের ওপর চাপ পড়ে। বাংলাদেশের তেল পাচারের অভিযোগ সব সময় ছিল। পাশের দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ না করলে এ অভিযোগ থেকে যাবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘জ্বালানি তেল পাচার অনেক দিন থেকেই হচ্ছে। আগে এটা কম হতো, এখন স্থলবন্দরে অনেক বেড়ে গেছে। সরকার চাইলে পণ্যবাহী ট্রাক যাওয়া এবং আসার সময় জ্বালানি পরীক্ষা করে দেখতে পারে। আরেকটা সমাধান হতে পারে, আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়। এটা সরকারের করার কথা ছিল, তবে এখন পর্যন্ত হয়নি। এসব কারণেই দ্রুত জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার। ’

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৫০ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে, সরকারকে জ্বালানী তেল আমদানিতে পাঁচ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছিল। জ্বালানি তেল আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন।

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, “সীমান্ত প্রতিবেশী দেশগুলোতে ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ডিজেল পাচারের আশঙ্কা আমরাও করছি। আমাদের তিন পাশে সীমান্ত। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের দামের ব্যবধান থাকলে পাচার ঠেকানো কঠিন হবে। প্রতিবেশী দেশের ট্রাক-লরিগুলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় ট্যাংক ভরে তেল নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। ’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে এই প্রক্রিয়ায় ডিজেল পাচার রোধে উদ্যোগ নিতে বলেছি। ট্রাক-লরি যাতে খালি ট্যাঙ্ক না নিয়ে পূর্ণ ট্যাঙ্ক বহন করতে পারে সেজন্য বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের গাড়িতে তেল শেষ হয়ে গেলে পরীক্ষা করে সর্বোচ্চ ২০ লিটার দিতে বলা হয়েছে। ‘

About Nasimul Islam

Check Also

অন্তর্বর্তী সরকারও কি ১/১১ সরকারের পথে হাঁটছেন?

২০০৭ সালের এক অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত এক-এগারো সরকার ক্ষমতায় আসে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *