প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বর্তমানে দেশের বাইরে নির্বাসিত হয়ে রয়েছেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহে এবং সেখানেই তার কৈশোর ও শৈশব কেটেছে। তার সেই স্মৃতিগাথা বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। জানা গেছে ভাঙ্গার পর সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ময়মনসিংহের টিএন রায় রোডে ‘অবকাশ’ নামের তার সুন্দর বাড়িটি অবস্থিত। কারা বাড়িটি ভেঙে ফেলছে সে বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন।
তসলিমা নিজেই সোশ্যাল সাইটে সেই স্মৃতিময় সেই বাড়িটি ভাঙার খবর জানিয়েছেন। তার লেখা ছুটির অবকাশ নিয়ে স্মৃতি, হাহাকার আর উত্তরসূরিদের প্রতি ক্ষোভ।
তসলিমা লিখেছেন, ‘কেউ কেউ ফে’ইসবুকে ‘অবকাশ’ ভাঙার ছবি পোস্ট করছেন, শোক করছেন, স্মৃতিচারণ করছেন। আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবনের সেই ‘অবকাশ’। ময়মনসিংহের টিএন রায় রোডে বাবার কেনা সুন্দর বাড়িটি অবকাশ। যারা এই অবকাশকে ভাংগার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার কোন যোগাযোগ নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখুন, এদের কেউ কেউ খুব ধুরন্ধর, কেউ কেউ কট্টর মৌলবাদী। আমি সবার চক্ষুশূল। ‘
তসলিমা আরও লিখেছেন, ‘যে বাড়িটি এক সময় শহরের সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞান ও প্রগতির কেন্দ্র ছিল, তা আজ ধ্বং”সস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রগতিশীলতা, উদারতা, মমতা, স্মৃতি ও সৌন্দর্যের কোনো মূল্য নেই সম্পদের দরিদ্রদের কাছে। শুনেছি বাড়িতে মায়ের হাতে লাগানো সব ফুলগাছ উপড়ে ফেলে আধুনিক বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। আমার কর্মঠ বাবার অকর্মণ্য উত্তরসুরিরা সেই বিল্ডিং-এ পায়ের ওপর পা তুলে বংশ পরম্পরায় খাবে। এখন আমি সেই বাড়ির কেউ নই। আমি তো ত্রিশ বছর ব্রাত্যই। ‘
ইট, পাথর, চুন, কংক্রিটে, কাঠে স্মৃতি থাকে না,স্মৃতি থাকে মনে। আমার মনে অবকাশ আছে। যে বাড়িতে আমি আমার প্রথম কবিতা লিখেছি, আমার প্রথম কবিতা পত্রিকায় ছাপা হয়, আমার প্রথম কবিতার বই লিখেছি, আমার নির্বাচিত কলাম লিখেছি, উঠোনে আমি প্রথম গোল্লাছুট খেলেছি, যে বাড়ির ছাদে আমার প্রথম পুতুল খেলেছি, যে বাড়িটির ভেতর প্রথম রবীন্দ্রনাথ আওড়েছি, মঞ্চস্থ করেছি। উঠোন জুড়ে নেচে চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ করেছি, যে বাড়িটিতে দাদা বেহালা বাজাতো, ছোটদা গিটার বাজাতো, বোন গান গাইতো, মা আবৃত্তি করতো, সেই বাড়িটি রইলো আমার মনে। কোনও হাতুড়ি শাবল কুড়োলের শক্তি নেই সে বাড়িটি ভাঙে।’
তসলিমা নাসরিন একজন নারীবাদী লেখিকা যিনি বিতর্কিত লেখার কারণে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে অবস্থান করেও তার লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি তার লেখায় ধাঁচ অনেকটা বদলিয়েছেন। মাঝে মাঝে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।