সম্প্রতি চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ঢালিউডের একঝাক তারকা। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবার এই তালিকায় নাম উঠলো দেশীয় ছবির অন্যতম সফল পরিচালক মালেক আফসারী। কিছুক্ষণ আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি।
এই ভিডিওটিতে শিমুর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বিশেষ করে জায়েদ খানের প্রসঙ্গে নানা কথা বলেছেন। মালেক আফসারীর সেই কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আমি ভাল বোধ করছি না. প্রায় ২০-২২টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী শিমু। প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর ছিলেন এই শিল্পী। শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারিয়েছেন এমন ১৮৪ জনের একজন ছিল শিমু। ২০-২২টি সিনেমা করার পর তাকে বাদ দেওয়া হলে তিনি প্রতিবাদী তো হবেনই। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ছিল, সেখান থেকেও প্রতিবাদ করা হয়। আসলে পাগল কিন্তু আমরা সবাই সিনেমা জগতে পরিণত হচ্ছি।
২০১৭ সালের কথা বলছি। তখন ১৭টি সমিতি আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে পদত্যাগ করতে চান মিশা-জায়েদ। কিন্তু সে আন্দোলন কোনো সুফল বয়ে আনেনি। তারপর ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন ম্লান হয়ে যায়। আমাদের শিমু যেভাবে নিশ্চুপ, নিস্তেজ হয়ে গেল।
মনে পড়ে শিমু বলেছিল- আমি শিল্পী। আমি শিল্পী হয়ে মরতে চাই। তিনি (শিমু) জানতে চেয়েছিলেন কেন তার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হবে।
আমি মনে করি যারা সিনেমাটি অনুসরণ করেন তারা সিনেমার সব খবর জানেন। গতরাতে শিমু হত্যার খবর পেয়ে আমি আর ঘুমাতে পারিনি। আমরা না জেনে বা না বুঝে কারো দিকে আঙুল তুলতে পারি না। এটা উচিত নয়. এটা আইনের ব্যাপার।
আমার সাথে হয়তো কারও ঝগড়া হয়েছে, আমি তাকে বলছি দেখে নিবো। এখন তারপর দিন যদি সে খুন হয়ে যায়, সেই খুন আমি করছি কিনা সেটা পুলিশ বের করবে। আমাদের বলা উচিত হবে না।
শিমুর চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগে এফডিসি থেকে ফোন পেলাম। আছে হাহাকার, কান্না। স্বজন হারানোর কান্না। এভাবে কি কেউ কারো মৃত্যু মেনে নিতে পারে? স্বাভাবিক মৃত্যু সবাই মেনে নেয়, কিন্তু কাউকে মেরে ফেলা, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করা, বস্তায় ফেলে দেওয়া মানা যায় না।
প্রশাসনের কাছে আমার দাবি খুনি কারা কারা এই অপরাধ করেছে তা খুঁজে বের করা। অনুগ্রহ করে খুঁজে বের করুন। আমি বিশ্বাস করি এটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে আসবে। কারণ এর পেছনে র্যাব আছে, পুলিশ আছে। সবাই তদন্ত করছে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা এগিয়ে আসুক। কিন্তু কেউ না জেনে বা না বুঝে কারো দিকে আঙুল তুলে না। এতে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটবে।
একপর্যায়ে শিমু বলছিলেন, যে কোনো পোস্টে জায়েদ খানের মন্তব্যে গিয়ে দেখেন মানুষ তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু এটা সত্যি। কমেন্ট বক্সে গিয়ে বোঝা যায় এই মানুষটিকে কেউ ভালোবাসে না। মানুষের ভালোবাসা থাকুক না থাকুক সে যদি কেয়ার না করে তাহলে আমাদের তো কিছু করার নাই।
আমার কথা হলো, আজ থেকে দুই বছর আগে যখন ১৭টি সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছিল, তখন তার (জায়েদ খান) বোঝা উচিত ছিল কেন আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করে এই চেয়ার দখল করছি। সামনেই নির্বাচন, এই নির্বাচনে কাঞ্চন সাহেব যদি আত্মসম্মান নিয়ে চেয়ার ছেড়ে দিতেন, আমার মনে হয় তার সম্মান আরও বেড়ে যেত। তার জায়গায় থাকলে চলে যেতাম।
এই সিনেমায় মানুষের মধ্যে এত দলাদলি, কেউ কি আমাদের ভালো বলছেন? একদমই না. একথা বলে ওরা সব ফালতু কথা। নোংরামির চরম পর্যায়ে চলে গেছে।
জায়েদ খান দু-তিন দিন আগে বলেছিলেন যে তিনি কিছু খারাপ ইঙ্গিত পাচ্ছেন। এফডিসিতে জঙ্গিরা আসতে পারে, যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই অশুভ ব্যাপারটা এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে এক শিল্পীর খণ্ড খণ্ড মৃতদেহের খবর আসে। পৃথিবী থেকে বিদায়। ভাগ্যিস এই ঘটনাটা এফডিসির ভেতরে ঘটেনি। তাহলে কিন্তু জায়েদ খানের ওপরে পুরো দোষটা চেপে যেত। উপরওয়ালাই তাকে রক্ষা করেছে।
প্রশাসনকে বলবো- ভাই, তাড়াতাড়ি বের করেন। নইলে আমাদের সিনেমায় একে অপরকে দোষারোপ করবে। এতে জটিলতা বাড়বে।
আমি সিনেমার সবাইকে অনুরোধ করব- না বুঝে, না শুনে, প্রমাণ ছাড়া কাউকে হত্যার জন্য দায়ী করতে পারবেন না। প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। উফ… এভাবেই হবে সিনেমা জগত! আমি ভাবিনি, ভাবতে পারিনি। আমরা এত নিচে যাব! এই চেয়ারে কি আছে আমি জানি না। আমি বুঝতে পারছি না কেন এই চেয়ারটি দখল করা উচিত। আসুন শিমুর মৃত্যুর সঠিক বিচারের জন্য অপেক্ষা করি।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) নিজ বাসা থেকে বের হয়েই নিখোঁজ হন শিমু। এরপর অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয় শিমুর পরিবার। এরপর সোমবার কেরানীগঞ্জে একটি ব্রীজের পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিমুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিমুর স্বামীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।