বাংলাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তিনি তার সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য গান করেছেন। এবং শ্রোতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ২০১৮ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আজ এই শিল্পীর তৃতীয় মৃ/ত্যু/বার্ষিকী। এই দিনটিকে ঘিরে তার স্মৃতিচারন করলেন আইয়ুব বাচ্চুর ছোট মামা আবদুল আলীম লোহানী।
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’- রুপালি গিটার ফেলে সত্যি সত্যি আকাশে উড়াল দিয়েছেন সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। হঠাৎ তার উড়ে যাওয়া কেউ-ই মেনে নিতে পারেননি। দেখতে দেখতে কেটে গেল তিন বছর। আইয়ুব বাচ্চুর নানি তাকে আদর করে বাঁশি নামে ডাকতেন। বাঁশি যেমন মানুষের মুখে মুখে থাকে তেমনি আইয়ুব বাচ্চুর নামও সবার মুখে মুখে থাকবে, এমন ভাবনা থেকেই নানি তাকে এই নাম দিয়েছিলেন। নানির সেই ভাবনা পূর্ণতা পেয়েছে। আজ সারা বাংলার মানুষের মুখে আইয়ুব বাচ্চুর নাম উচ্চারিত হয়। ছোটবেলা থেকেই গানের জন্য পাগল ছিলেন প্রয়াত এই কিংবদন্তি। গানের নেশায় সবসময় মগ্ন থাকতেন তিনি। গানের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলেন আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রিয় ভাগ্নের স্মৃতিচারণ করে আইয়ুব বাচ্চুর ছোট মামা আবদুল আলীম লোহানী জানিয়েছিলেন, ‘লেখাপড়ায় অমনোযোগী আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের সিটি কলেজ থেকে পাস করেই নিজের বড় মামার জুতার দোকান মতিন ফুটওয়্যারে ঢুকে পরেন। তবে দোকানে যে তার মন কখনও বসত না, তা স্পষ্ট বুঝা যেত। বিকাল হলেই বাচ্চুর বন্ধুরা এসে দোকানে উঁকিঝুকি দিত আর তখন থেকেই বাচ্চু ছটফট করতে থাকত, কখন বাইরে যাবে। এরপর হঠাৎ করেই চোখের পলকে মিলিয়ে যেত। কোথায় যেত, সেটাও আমাদের সবার জানা ছিল। বিকালের সময়টায় আইয়ুব বাচ্চু তার বন্ধুদের নিয়ে গিটার বাজিয়ে গানের চর্চা করতেন।’
আইয়ুব বাচ্চু প্রথম যখন ঢাকায় আসেন, তখন তিনি উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে এবং সেখানে তিনি লবিতে পাটি পেরে ঘুমাতেন। ওই সময়ে ছোট ছোট অনুষ্ঠান, বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দিন পার করতেন। সেই সময়ে একজন ভদ্র মহিলাকে আইয়ুব বাচ্চু খালা নামে ডাকতেন, যার সরকারের উচ্চপদস্থ অনেক লোকজনের সঙ্গে ওঠা-বসা ছিল। সেই সুবাধে তিনি আইয়ুব বাচ্চুকে সোনারগাঁ হোটেলের একটা অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। তখন থেকেই দিন বদলাতে থাকে আইয়ুব বাচ্চুর। এরপর বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যান্ড দলের সঙ্গে।
ছোটবেলা থেকেই বেশ দানশীল ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। গরিব কেউ তার কাছে এলে তিনি কখনও তাকে খালি হাতে ফেরত দিতেন না। এ ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদেও অনেক দান-খয়রাত করেছেন তিনি। নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে আইয়ুব বাচ্চুর আছে মগবাজারের একটি ফ্ল্যাট যেখানে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন এ বি কিচেন এবং তার ভাণ্ডারে যত বাদ্য যন্ত্র ছিল সব রাখা হয়েছে সেখানে। সেই ফ্ল্যাটে আইয়ুব বাচ্চু কখনও থাকতেন না, তিনি থাকতেন ধানমণ্ডিতে।
ঢাকায় থাকলেও আইয়ুব বাচ্চুর মনেপ্রাণে মিশে ছিল চট্রগ্রাম। এ কারণেই সময় পেলেই ছুটে যেতেন চট্টগ্রামে। সব আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খুবই ভালো আচরণ করতেন তিনি। নিজের বাবা-মাকে অনেক ভালবাসতেন আইয়ুব বাচ্চু। বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি এক ভিডিওতে সাবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, কেউ যেন তাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে আসেন। এখন আর এসব কেউ বলবে না। নতুন করে গিটার হাতে তুলবেন না এই কিংবদন্তি। সাড়ে তিন হাত ছোট্ট মাটির ঘরে নিজের নিবাস গড়েছেন তিনি। এখন তার লক্ষ্য আকাশের ওপারে নিজের সাম্রাজ্য গড়া। ওপারে ভালো থাকুন প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অসংখ্য গান রয়েছে যাকিনা এখনও শ্রোতা মনে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। তিনি সংগীতের পাশাপাশি গীতিকার এবং গীটারবাদক হিসেবেও বেশ পারদর্শী ছিলেন। আজ তার স্মরনে অনেকেই অনেক ভাবে স্মৃতিচারন করেছেন। এখনও বাংলাদেশে তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী রয়েছে।