সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ঘটতেই দ্রুত সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তরুণ অলিউর রহমান নয়ন (২০)। এরপর দীর্ঘক্ষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে থেকে সবাইকে এ বিষয়টি অবগত করছিলেন তিনি। কখনও কথা বলছিলেন, আবার কখনও তুলে ধরছিলেন সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নানা চিত্র। তবে ৪১ মিনিটের মাথায় হঠাৎ বিকট শব্দে মুঠোফোনের ক্যামেরায় সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পরেই আসে তার মৃত্যুর খবর।
এদিকে একমাত্র বোন নাইমার স্কুলের বেতন বাকি। স্কুলের ব্যাগও ছিঁড়ে যায়। এসব খবর রাখতেন নাইমার ভাই অলিউর রহমান নয়ন। তবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে তিনি নিহত হন।
নয়নের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগালী গ্রামে। তিনি বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শ্রমিকের কাজ করতেন।
গত শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ডিপো থেকে নয়ন তার প্রথম ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি দগ্ধ হন। রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর ২টায় মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শুক্রবার বিকেলে তিনি আদরের ছোট বোনের জন্য এক হাজার টাকা পাঠান। সোমবার সন্ধ্যায় বলেন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা জান্নাত।
নাইমা বলেন, ‘রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আমার বড় ভাই মারা গেছে। কোরবানি ঈদে ভাই বললেন নতুন জামা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আজ তার নিথর দেহ ঘরে এসেছে। ‘
নয়নের মৃত্যুর খবর শুনে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস।
লাশ আসার পর প্রতিবেশীরা ভিড় করে বাড়িতে।
ওই বাড়িতে গেলে নাঈমা জান্নাতের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, নয়ন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
‘বড়ভাই আমার সব খবর নিতেন। এখন আমার খবর কেউ নেওয়ার থাকল না। ভাই নতুন ব্যাগ কেনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। যেদিন ব্যাগ কিনতে যাব, সেদিনই শুনলাম তার মৃত্যুর খবর,’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিল নাইমা।
এদিকে ছেলেকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অলিউর রহমানের বাবা আশিক। সংবাদ মাধ্যমের সানবে বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ছেলের পোড়া মুখ দেখতে হবে জানতে, ছেলেকে চাকরিতে যেতে দিতাম না। সব শেষ হয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।