দেড় দশক ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপি আবারো রাজপথে ফিরতে চায়। ক্ষমতাসীনদের দমন পীড়নে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া দলটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরতে চায়। আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কেমন হবে তা নিয়ে দলের নেতাদের মতামত নিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
ভবিষ্যৎ আন্দোলন নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি নেতারা কী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন, তা দেখার অপেক্ষায় ক্ষমতাসীনরাও। বিএনপির সমমনা দলগুলো তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করবে।
নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ফিরতে চায় বিএনপি। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনীতি করতে চায়। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আজ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করে আবদুল মঈন খান বলেন, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, জনগণের ভোটের অধিকার নেই এবং এখানে গণতন্ত্রের অধিকার নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আর আমাদের যে কর্মসূচি তা চলমান রয়েছে। এই চলমান কর্মসূচি আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহত রাখব। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
নির্বাচনপরবর্তী পরিকল্পনা কিংবা আন্দোলন কেমন হবে— এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শুক্রবার বলেন, মূলকথা— জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, তিনি দেশকে পুনর্গঠন করেছেন, দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করেছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সূচনা করেছেন- আজকে সেটি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে দেশকে রক্ষা, তিনি যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে আবার মেরে ফেলা হয়েছে। সেটিকে পুনরুজ্জীবিত করার যে লড়াই, সেই লড়াই চলছে। আর সেই লড়াইয়ের যে বিভিন্ন কর্মসূচি তা আপনাদের (সাংবাদিক) জানানো হয়।
শিগগিরই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান এই নেতা।
এদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ৩০ জানুয়ারি বা তার আগে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
সেক্ষেত্রে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়ে নেতারা বুধবারের বৈঠকে বলেন, ভোট বর্জন করে জনগণ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, তারা বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে আছে। তাই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে সমাবেশ করে জনগণকে বার্তা দিতে হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বড় দল হিসেবে বিএনপি মাঠে থাকবে। সমাবেশ হলে নেতাকর্মীরা আবারো উজ্জীবিত হবে। দেশ ছাড়াও বিদেশিদের কাছেও বার্তা যাবে বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে। আরও শক্তি নিয়ে মাঠে নামেন। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার তারেক রহমান ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এর আগে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গেও পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সিনিয়র নেতা জানান, স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করতে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। নেতাকর্মীরা আদালত থেকে জামিনও পেতে শুরু করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অতীতের সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম ও ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ কাজ করেছেন। তারা আন্দোলনকে নানাভাবে গতি দিয়েছে। এত মামলা, হামলা ও গণগ্রেফতারের পরও তারা কর্মসূচি পালন করেছে। স্থায়ী কমিটির নেতারাও রাস্তায় রাস্তায় মিছিল, লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণ বিএনপির পক্ষে ছিল। আমাদের অনেক নেতা কারারুদ্ধ। তা সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ জোরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।